সে কী কাব্য! এমন ক্যাটক্যাটে কমলা রঙের পাঞ্জাবি পরেছ কেন এই বৈশাখের দুপুর বেলায়!
পাঞ্জাবিটা আমি বসন্তে কিনেছিলাম তোমার সাথে বসন্ত উদযাপন করব বলে। তুমিই তো এলে না। আমারও আর পাঞ্জাবিটার ভাঁজ খোলাই হলো না।
তাই বলে এই চৈত্র পেরুনো বৈশাখের প্রথম দিনে তুমি কমলা রঙের পাঞ্জাবিতে রোদ পোহাবে! দেখো তো রোদের ঘামে ভিজে ভিজে তুমি কেমন জবজবে হয়ে আছো।
তাহলে বোধ-হয় রোদেরও বেশ পছন্দ হয়েছে রঙটা।হা হা হা হা।আর তাছাড়া লাল সাদার বৈশাখী মিছিলে আমাকেই কিন্তু আলাদা করে সকলের চোখে পড়ছে দেখো! তোমার প্রেমিক প্রবর বরাবরই সকলের চেয়ে আলাদা কবিতা।
কাব্য! তোমার যুক্তির কৌটায় সরঞ্জামের অভাব হবে না জানি। তা একবার আমায় বললেই হতো! আমিও আজ না হয় বসন্ত হয়েই আসতাম!
তোমার মাথা খারাপ! সকল মানুষ ড্যাবড্যাব করে তখন আমার প্রেমিকার দিকেই তাকিয়ে থাকত। সে রিস্ক আমি কী করে নেই বলো!
হা হা হা হা কাব্য তুমিও! তা বাবু মশাই নিজেকে সকলের চোখে উন্মুক্ত করে দিয়ে,
আমার কাব্যকে যে সকলের চোখের করে দিলে!
এটা কী ভীষণ অন্যায় হলো না!
একদম না! প্রথমত তুমি লাল সাদার মিছিলে এতোটাই মিশে আছো যে,
কারও চোখে আলাদা করে আটকে যাবে না আজ তুমি।
চেয়ে দেখো!
সকল রমনীগণকে প্রায় একই রকম লাগছে। নিজের প্রেমিকাকেই তো ঠিকঠাক মেলাতে পারবে না অনেকে!
তোমাকে আর চোখ দেবে না কেউ!
এই!
তুমি আমাকে মেলাতে পারছ তো কাব্য!
নাকি সেখানেও চোখ যাবে অন্য পাড়ায়!
যার মন কবিতার আঁচলে বাঁধা পড়েছে জন্ম জন্মান্তরের তরে। যার চৈতন্যের প্রতিটি অণু পরমাণু অংশে কেবল কবিতার বিস্তার। তাকে তুমি কোন খেয়ালে বিচ্ছিন্নতার গল্প শোনাও প্রিয়ে!
কাব্য কেবল কবিতাকে চোখে দেখা সৌন্দর্যে নয়!কাব্য তার কবিতার অন্তর সৌন্দর্যে অবগাহন করে থাকে নিরন্তর।
কাব্য! তোমার এই মোহময়ী প্রণয় আবর্তেই কবিতা নিমগ্ন থাকে। কবিতা নিমগ্ন থাকবেও তোমার এই মহা সত্য প্রণয় মোহে। তাই তো বসন্ত বলো আর বৈশাখ। পার্বণ কিংবা উৎসব! কবিতার চৈতন্য চেতনেও তুমিই কবিতার একমাত্র প্রণয় সুধাকর।
এসো দেবী! আমাকে স্পর্শ করো। তোমার দুধসাদা আঙুলের প্রতিটি শিরা উপশিরায় ধাবমান রক্ত প্রবাহে,
আমি তোমারই উষ্ণীষ স্পর্শ অনুরাগে ভিজব।
এই যাহ্!
কাব্য!
বৃষ্টি শুরু হলো যে। ইস্ ভিজেই যাচ্ছি। চলো চলো ওই ছাউনির নিচে দাঁড়াই।
কবিতা এ বৃষ্টি আমাদের জন্য। এ বৃষ্টি আমাদের প্রণয়ের তৃষ্ণা নিবারনের জন্য। এসো কবিতা আমরা দু’জনা বৈশাখের এই বৃষ্টি জলে সমর্পিত হই।আর যাপন করি আমাদের অনন্তের প্রেমাঞ্জন।
এসো কাব্য এসো।
প্রকৃতির সবটুকু মায়া সুখ মেখে নেই তুমি আমি। আমরা আবারও সজীব হয়ে উঠি আমাদের সুখেন্দু আগামীর জন্য।
এসো প্রিয়ে এসো।
বরিষ ধরা মাঝে শান্তিরও বারি,
বরিষ ধরা মাঝে শান্তিরও বারি।
শুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়ায়ে ঊর্ধ্বমুখে নরনারী,
বরিষ ধরা মাঝে শান্তিরও বারি…….
নাজনীন নাহার- কবিও সাহিত্যিক।