Take a fresh look at your lifestyle.

বীরাঙ্গনা

384

 

সম্ভ্রমের সবটুকু শুদ্ধতা বিকিয়ে দিয়েছিলাম
এক ঘোর আঁধারে—-
যখন কেবলি স্বপ্নগুলো প্রস্ফুটিত হতে শুরু করেছিলো
ভোরের চাতালে,
সুখের পাখীটা উড়ু উড়ু ছিলো ধান মাড়াই আর নবান্নের যৌথ উৎসবে!
বহতা নদীর জোয়ারে পা ডুবিয়েই আমি
হারিয়ে যেতাম,
সেই প্রজাপতি রঙে রাঙানো সোনালি দিনগুলির ডানায়।

হঠাৎ অচেনা বর্গি এলো এই দেশে,
দেশ জ্বললো ওদের হিংস্রতার তীব্র দাবানলে!
রক্তগঙ্গায় ভাসলো সবুজ জমিন!
বন্দি হলো স্বপ্নগুলো হিংস্র শকুনের আস্তানায়!
মাথার উপর ছায়াটুকু মায়ের আঁচলখানি
লুটালো যে শতছিন্ন হয়ে পথের ধুলোয়!

আমি যে হলাম বীরাঙ্গনা!

যুদ্ধে জয়ী হলো দেশ,বীর সেনানীর চোখে আনন্দ ঝিলিক
হৃদয় শীতল হলো বিজয়ের শুদ্ধ হাওয়ায়,
ওরা হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা,
কেউ কেউ পেলো মরনোত্তর পদবী!
কত যে সম্মান দেয়া হলো সাহসী যোদ্ধাদেরকে!

আর আমি!
সব হারানোর তলানিতে জমা হওয়া অমরত্বের রাজটীকা কপালে পড়েছি—-
বীরাঙ্গনা!!
খসাতে পেরেছি কী সে তিলক আজও কপালের!
শত দ্রোহে! শত কান্নার মিছিলে পদযাত্রা করে!

যাপিত জীবনে আঁধার আমার পিছু ছাড়েনি তো!
কখনো ভ্রুকুটি, কখনো চাহনি লালসার, প্রাপ্তির ঝুলি করেছি ভারি!
স্বমহিমায় নিজের অস্তিত্ব করেছি দৃঢ়,আপন শক্তিতে!
আমি বীরাঙ্গনা! নত করতে জানিনে নিজ শির!
এদেশের প্রতি ধুলিকণায় আমার ত্যাগের গল্প জড়িয়ে আছে,
আছে সোনালি অক্ষরে লেখা ইতিহাসের প্রতিটি বর্ণমালা ছুঁয়ে !

স্বাধীনতার সূর্যের আলোয় স্নাত হয়ে, আগুনের পরশমনি ছুঁয়েছি,
মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়ে পরিপূর্ণ শুদ্ধ মানুষ হয়েছি,
বীরাঙ্গনার তিলকে যদিও পরিচিত এ আমি,
তোমাদের জীবনের মঞ্চে,আলোচনা সভা জুড়ে
দ্বিধাগ্রস্ত ছিলে কি আমায় নিয়ে মনে,চেতনায়!

কোনদিন চাইবো না আমার সোনালি অতীত,
স্বপ্নদেখা প্রজাপতির বর্নিল ক্যানভাস কিংবা
জোছনাকুমারীর মতো একটি চাঁদোয়া আকাশকে,

বীরাঙ্গনা রাজটিকা কপালে পরেও
অতঃপর আমিও মানুষ!
শৃঙ্খলাহীন স্বাধীন দেশের মাটিতে!
এই স্বাধীনতার বীজ আমিও বুনেছি তোমাদের সাথে—-
শুধু আপন সত্তাকে বিসর্জন দিয়ে ।

হাছিনা মমতাজ ডলি – কবি,লেখক ও সাহিত্যিক

Leave A Reply

Your email address will not be published.