এক
খেয়াল রেখো
কবি বিকাশ চন্দ্র হাওলাদার
আসছে যত দিনগুলো ঐ
চোখের কোনে নতুন আশায়
থাকতে রবি আবছা হয়ে
বিলীন কেন চোখের তারায়
খেয়াল রেখো।।
শিখরে শিখরে শুভ্র তুহিনে
উষ্ণতা যে আঘাত হানে
গরল বায়ুর পদাঘাতে বিশ্বটা আজ
উষ্ণায়নে মরছে কেন
খেয়াল রেখো।।
দিনের শেষে শ্রমিক মজুর
ধুঁকছে কেন বারান্দাতে
আকাশ থেকে তারাগুলো
খসছে কেন বিনাদোষে
খেয়াল রেখো।।
জামার তলে বক্ষ আছে
তার তলে এক হৃদয় আছে
কথার ঘায়ে বুলেট ছুঁড়ে
হৃদয় কেন দীর্ণ করে
খেয়াল রেখো।।
চাঁদের প্রেমে জোয়ার ভাঁটা
সেকি নদীর জানার কথা।
অষ্টাদশী জোৎস্না গায়ে
তাকিয়ে শকুন তাহার পানে।
মানুষ যেন মানুষ ধরে
মানুষ ভেবে সাপ না ধরে
খেয়াল রেখো।।
দুই
দ্বিধা দ্বন্দ্ব
প্রবীর বিশ্বাস
অশ্রু জলে ভাসে তব শত অভিমান
বসন্তের ফুল ফোটা হলো অবসান।
পুষ্প বনে ফুল ফোটে,গন্ধ সুধা ঢালে
মধুকর ক্লান্ত হয়, পরাগের জালে।
বাঁশরি বাজেনা মুখে, রাধা হীন বনে
ফিরে যায় অলি কূল, মত্ত সমীরণে।
ছলো ছলো দু’নয়নে ,রাশি রাশি কথা
মলিন হৃদয়ে চাপা বিরহের ব্যথা ।
নিশিরাতে জ্বেলে দীপ,আঁধারে কি খোঁজো
মালতীর মালা গেঁথে,বসে আছি আজো।
বাঁকা চাঁদে জ্যোতি নেই, পূর্ণিমাকে খুঁজি
মধুর যামিনী আর আসিবেনা বুঝি ।
মাধব কি ফিরে কভু আসে বৃন্দাবনে
যমুনার মত্ত ঢেউ, মাতিবে কি রণে?
মনে মনে গাঁথো কেন, বিরহের মালা
উদগারী দাও মোরে, বিষময়ী জ্বালা।
অন্তরালে লুপ্ত থাকো অহর্নিশি কাঁদো
সংসারে সেবা করো, দক্ষ হাতে রাঁধো।
নিন্দা তব ভূষণেতে , অলংকারে শোভা
দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখো, রত্ন মণি লোভা।
পৃথিবীর গৃহ কোণে, আছো চুপ চাপ
ভাষা হীন নীরবতা, মনে নেই পাপ ।
দীর্ঘশ্বাসে মুক্তি চাও, জ্বলো দ্বিধা দ্বন্দ্বে
ভালোতে না রাখিলে মোরে,রাখিবে মন্দে?
তিন
আজ কোথাও আর কোন অন্ধকার নেই
মিরাজ হাসান
আজ কোথাও কোনো অন্ধকার নেই আর,
বিবিধ সুখ- আমাদের মজ্জাগত অসুখ আজ বাজারে রগরগে আলোয় বিকোতে শুরু করেছে।
কবেকার কোন আদিম অন্ধকূপ ফেলে এসেছি
কতকাল আগে, জানা- অজানা মানুষের উঠানে;
এমনই পৌষ ছিলো আয়ু পথ ধরে, পারস্যের বণিক তখন
সওদা করে ঠিকানায় ফিরে যায়।
আমাদের ফেরা নেই, কারোর সাথে কোনো সওদা নেই!
বিরামহীন নিয়ম নিয়তি আমাদের মেলে ধরে আছে শিল্পের বাজারে- উন্মুক্ত সকল দ্বার যার সবকিছু খোলা।
অথচ আমাদের ফেরা নেই, স্বপ্নের তাগাদা নেই!
আমরা বিভোর ভুলে আছি আমাদেরকে- আয়নার সামনে মুখোমুখি দাড়ানো সেই হাড়গুলোকে আমরা ভুলে আছি জীবন্ত স্বত্বায়।
এই পৃথিবী এক অদ্ভুত মদের গেলাসে বরফ গলাতে ব্যস্ত,
রোদের আলো সব নিভে গ্যাছে বড় বড় শহরতলীতে!
সেখানে রকমারি আলোর বিজ্ঞাপন- বড় সস্তায়।
এমন বাধিত নির্মম জীবন তবুও সুখের- দেয়ালে দেয়ালে পাতানো নানান রঙ; আমাদের উল্লাসিত ছবি।
কারোর কেনো ব্যথা- অনুযোগ নেই নিয়নের পর্দায়।
অদ্ভুত একটা দায়—তবু, সবারই রয়ে যায়।
চার
সন্ধানে
শিল্পী
ঘুম ভাঙা জড়তা চোখে মোবাইল হাতড়ে বের করেছি কম্বলের নীচ থেকে।
ভোর চারটে।
হে ভগবান, আজকাল তুমিও ডিজিটাল হয়ে গেছ।
প্রেম তো কবেই ডিজিটাল।
নিস্তব্ধ ভোরে পাশে স্ত্রীর নিশ্বাসের শব্দ আর দেয়ালে ঘড়ির কাটার শব্দ ছাড়া সব ব্ল্যাক।
”সবজি রাখবেন নি সবজি”, মাছ রাখবেন নি মাছ” একটু বাদেই শুরু হবে।
ডিজিটাল ছুটে চলে নতুন গ্রহের সন্ধানে।
আইএসটি’তে ঢং করবে বারোটার কাটা।
চোখের পাতা আলাদা হবে আবার ভোর চারটা।
পাঁচ
তুমি এক মস্ত বড়ো কবি
মোঃ রফিকুল ইসলাম রাজু
বিষাদের বিদায় তবুও বড় ভুল
একান্তই তোমার
নিছক অভিমান
কেনো দায় বর্তাও প্রিয়জনকে?
তোমাকে দাবিয়ে রাখার
চেষ্টা টুকু আগেই তো গিলে খেয়েছো কত-না বাহানায়।
অথচ;তোমার জন্য আমার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল
ব্যস্ত এই শহরের মতন।
বরং,
ভালোবাসার চিৎকার টুকু
হরণ করে পালিয়েছো এই সভ্য নগরে।
আজ তুমি মস্ত বড়ো কবি!
কি দায় পড়ে আমাকে প্রিয়জন বলে স্বীকার করা।
শহরের গলিতে তোমার এলোমেলো চুল
আর কালো চশমা,
অনেক বড় বড় কবি তোমার কাঁধে
ঝুলানো ব্যাগে ভর করে হাটে।
তুমি হাঁটো শহর জুড়ে
খ্যাতির ইট পাথর পিসিয়ে।
আজ তুমি মস্ত বড়ো কবি এই শহরে।
তুমিই বলো,অভিমান কার থাকা প্রয়োজন?
শুনেছি;
তোমার কবিতা না-কি বেরসিক প্রেমি,
জাত কুল ভুলে তোমার চশমায় ছবি হয়
অনেক সুন্দরী যুবতী।
এই শহর,শহরের সভ্যতা।
সব;সব তোমার নখদর্পনে,
তুমি ছাড়া কোনো কবি আজো বেঁচে নেই।
তোমার কবিতার চরণ আজ ভালোবাসার যে কথা বলে,
বলতে পারো;
কোথায় তোমার কবিতার শেঁকড়?
আমি জানি,
ঐ যে দেখছো দূরত্ব
ঐখানেই তোমার শেঁকড়।
যদি প্রশ্ন করি তুমি কি আদৌ প্রেমের কবি?
কি বলবে তখন অকৃতজ্ঞের মতোন।
না-কি ডুব জলে করিবে আত্ম হরণ?
হয়তো,হ্যঁ;হয়তোবা তাই!
কিন্তু ;না না,আমি চাই
আবার তোমার জন্ম হোক এই গ্রামে।
ছয়
যৌতুকের ভার
মমিন রহমান
আজকাল দেখো মানব কুলে
যৌতুকের-ই খেলা
শ্বশুর মশাইর টাকা দিয়ে
ভাসায় রঙিন ভেলা।
যৌতুকের ঐ যাতাকলে
কতো নারী মরে
স্বপ্নে বুনছে রঙিন জীবন
থাকতে বাবার ঘরে।
বেশি যৌতুক পেতে কসাই
মেয়ের বাপকে ঠাসে
বিয়ের দিনে শ্বশুরবাড়ি
কত্তো স্বজন আসে।
ফকির গুলো জুব্বা পরে
মুচকি হাসন হাসে
মেয়ের বাবার বুকটা দেখো
চোখের জলে ভাসে।
যৌতুক পেলে জামাই বেয়াই
সকল ফকির খুশি
গরিব বাবা ব্যর্থ হলে
খায় মেয়ে কিল ঘুসি।
যৌতুক চাপে কতো নারী
গলায় পরে ফাঁসি
পাষাণ্ডের দল আছে যতো
দেয় যে অট্রহাসি।
সাত
শীতকাল
জাকির হোসেন
বিউগল বাজিয়ে চলছে শীত
ছাড়তে হবে পথ।
স্বাভাবিক নিয়মে সত্তার
সংহার চলবেই,
শুভ বলে অশুভ বলে
নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নেই।
যথা সময়েই আসবে
বিচ্ছিন্নতা ও বিদায়ের কথা,
ঔদাসীন্যের আলোয়ান
থাকবে না আর গায়ে।
কবিরা ওসব কথা
বলে না কেনো কবিতায়?
নিয়তি বড়ই অনড়!
খ্যাতি দিয়ে ধুয়ে মুছে
এড়ানো যাবে না জবাবদিহির দায়।
পাখিও গায়, ঘুরে,
দিনান্তে ফিরে আপন নীড়ে।
নদীর প্রহত পানি কোথায় যায়?
আমরাও থাকবোনা সুনিশ্চিত;
শীতের তীব্রতা নামে প্রকৃতির নিয়মে
এদিকে ওদিকে সেদিকে,
চকিতে মুছিতে চাই আপন গ্লানি।
অতঃপর ধরণী-
মাতাক মন ও মনন।
শীত এভাবেই চলে
যুগ যুগ ও শতাব্দী ধরে।
আব্দুল মতিন – সম্পাদক চেতনা বিডি ডটকম।