আমার প্রিয় কফি হাউস। সবাই খুব আশ্চর্য হবেন; কফি হাউস কখনও এমন হয়? হ্যাঁ হয় শুধু দেখার দৃষ্টি ভঙ্গিটা যদি আলাদা হয়। আমাদের চলার পথে প্রতিনিয়ত কতো কিছু দেখি কিন্ত উপলব্ধি এবং অনুভবের জায়গায় ঠিক কতোটুকু স্হান দেই। আমরা সব সময় সুন্দর ফুলের বাগান আর ফুলদানিতে রাখা ফুলের কদর করি। কিন্তু রাস্তার ধারে ফুটে থাকা বুনোফুল যে আরও অনেক বেশি শোভাবর্ধন করে এটা আমরা কয়জন দেখতে পাই। আমার প্রিয় কফি হাউসটাও ঠিক এরকম।
খুলনা শহরে আসার পর আমরা প্রায়ই খুব ভোরে রওনা দিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাই। মাঝ পথে গিয়ে চা খাই। প্রথম যেদিন আমরা খুলনা থেকে শ্বশুর বাড়ি যাত্রা করি। আমরা গোপালগঞ্জ পার হয়ে ভাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি থেকে নামলাম। পাশেই সুন্দর একটা হোটেল থাকা সত্বেও আমি বললাম আমি ঐ চাচার দোকানে চা খাবো। এবং আমি গিয়ে বললাম চাচা আমি এককাপ চা চাই। উনি সাথে সাথে ঘাড়ের গামছাটা দিয়ে বেঞ্চ মুছে দিয়ে বললেন মা এখানে বসো। তারপর চাচা আমাকে চা দিলেন। গরুর দুধের দারুণ এক কাপ চা তার উপরে সর দেওয়া। আহা এত স্বাধের চা অসাধারণ। আমি খুব খুশি হলাম। সেই থেকে শুরু হলো আসা যাওয়ার পথে চাচার দোকানের চা খাওয়া।
ভালোবাসা আর চায়ের সম্পর্কটা মিলেমিশে কবে যে একাকার হয়ে গিয়েছে নিজেও জানিনা। মাত্র দুদিন আগে, ভাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড নেমে আমি গিয়েছি সুন্দর হোটেলের ওয়াসরুমে।
ফিরে এসে দেখি একটা গরম পরোটা দুটো রসগোল্লা চাচা রেডি করে রেখেছেন। আমি খুব আশ্চর্য হলাম। উনি কিভাবে বুঝলেন এটা আমার খুব প্রিয় খাবার। তারপর চাচার তৈরি অসাধারণ এক কাপ গরুর দুধের চা। কবে কখন সম্পর্কটা হৃদয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছে আমি জানিনা। ভালোবাসার কাছে হার মেনেছে চায়ের দাম। প্রতিবার শ্বশুরবাড়ি আসা যাওয়ার পথে চা খাওয়া হয়, কিন্তু টাকা আর দেওয়া হয় না। সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো এমনই হয় যেটা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
আমার আজকের নিবেদন এটাই ছিলো। আমি এই চায়ের দোকানের নাম দিয়েছি কফি হাউস। কফি নেই কিন্তু ভালোবাসা আছে। যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
ইসরাত জাহান – লেখক ও সাহিত্যিক।