গাড়ি থেকে নামলেন জামিল সাহেব আর নীলা। হঠাৎ ওনাদের দেখে দুজনেই চমকে উঠলো। পিয়াসা একটু ইতস্তত বোধ করতেই শিহাব বললো বাবা, ডাঃ পিয়াসা আমার সহযোদ্ধা। বাবা পিয়াসাকে কাছে নিয়ে বললেন তোমাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো। তোমারা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তবে আমার একটা কথা আছে, তোমারা দুজনেই সপ্তাহে একদিন অসহায় রোগীর ফ্রি চিকিৎসা দেবে। দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠলো জ্বী অবশ্যই।
শিহাবের আম্মু দূরে দাড়িয়ে কি যেনো ভাবছিলেন। কাছে এসে দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেজা কন্ঠে বললেন আমার কাছে তোমারা তোমাদের ট্রাষ্টি বোর্ডের জন্য যখন যা প্রয়োজন সংকোচহীন বলবে। আমি পাশে থাকবো সবসময়। দুজনেই বলে উঠলো আমাদের জন্য দোয়া করবেন। জামিল সাহেব আর নীলা তখনও কি বুঝেছিলো আজই পিয়াসার সাথে ওদের শেষ কথা? শেষ দেখা।
পিয়াসা আজ একটা লাল বেনারসি পরে এসেছিলো। অপরুপ সে রুপ আসলে ভুবনমোহিনী। সৃষ্টিকর্তা যেনো নিজ হাতে তৈরী করে মাত্র কিছুদিনের জন্য পাঠিয়েছিলেন।
জামিল সাহেব বললেন চলো কোথাও বসে কফি খাই।
শিহাব না বাবা আজ থাক। আমাদের ডিউটি আছে। তা তোমারা এদিক হঠাৎ করে?
জামিল সাহেব অনেকদিন গ্রামে যাইনি তা তোমার মাকে নিয়ে গেছিলাম দুপুরে। ফেরার পথে তোমাদের দেখে গাড়ী থামালাম।
শিহাব তো মাকে নিয়ে তুমি কফি শপে যাও আমারা হাসপাতালে যাই।
ওনারা যাবার পর পিয়াসা শিহাবের বাইকে চেপে বসলো। হঠাৎ শিহাব বলে উঠলো চলো হারিয়ে যাই।
পিয়াসা কোথায়?
ঐ দিগন্তে আকাশের বূকে।
পিয়াসা দূর পাগল আমি হারিয়ে যাই যদি??
শিহাব আমার আত্মা বের হয়ে যাবে।
পিয়াসা আরে না আমি এতো সহজে হারালে আমাদের স্বপ্নের কি হবে?
আর বলোনা বাসায় আম্মু আব্বু উঠে পড়ে লেগেছে আমার বিয়ের জন্য। কি করি বলতো?
ঐসব সংসার টংসার আমার হবেনা শিহাব। নিজেকে আজ অচল পয়সা মনে হয় জানো?
শিহাব হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলো। খুব আস্তে ড্রাইভ করছে আর কথা বলছে দুজন।
নীলা আর জামিল সাহেব কফি খেতে খেতে বলছে আমরা কি কোন ভুল করলাম নীলা?
মেয়েটাকে আজ যেনো চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছিনা।
শিহাবের জন্য যেনো ঐ উপযুক্ত ছিলো। দুজনেই সমান মেধাবী।
শিহাব পিয়াসাকে বললো কাল আমারা ইঞ্জিনিয়ারের প্লান এনে দ্রুতই কাজ শুরু করবো। বাবার পরিচিত রাজমিস্ত্রী ঠিক করে ফেলবো।
পিয়াসা, আচ্ছা শিহাব তুমি এতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছো কেনো বলতো?
শিহাব, আরে পাগলী বোঝনা হঠাৎ যদি তোমার কিছু একটা হয়ে যায়।
পিয়াসা, কি মৃত্যু ?
শিহাব আবারো? আমি বলছি হঠাৎ যদি পাত্র ঠিক করে ফেলে তোমার জন্য। তুমি তো ব্যস্ত হয়ে পড়বে বেশ কিছুদিন।
পিয়াসা আরে না আমি একদিন ও হাসপাতালে আসা বন্ধ করবোনা। আমার মৃতদেহ আসলেও আসবে দেখে নিও।
দুজনেই হেসে উঠলো। আসলে পাঠক, মানুষ কি পৃথিবী ছেড়ে যাবার আগে কিছু বুঝতে পারে? প্রশ্নবিদ্ধ করে রাখলাম আপনাদের।
হঠাৎ শিহাবের বৌ এর ফোন এলো।
আমার বিমানের টিকিট কনফর্ম করো। ও হ্যাঁ আমি এখনই পাঠাচ্ছি তোমাকে।
পিয়াসা, কে কিসের টিকিট কেনো?…
চলবে…..
পারভীন আকতার পারু – সহ সম্পাদক, চেতনা বিডি ডটকম।