পিয়াসা আজ ছুটি নিয়েছে। রাতে শিহাবের সাথে কথা বলেই।
শিহাব হাসপাতালে এসেছে বড্ড বিষন্ন মন নিয়ে। অনেকে জানতেও চেয়েছে স্যার আপনার কি হয়েছে? শিহাব বলেছে আজ শরীরটা ভালো নেই। বেশি সময় থাকবো না। কিছু রোগী দেখে রাউন্ড শেষ করে দ্রুত বাসায় চলে এলো। বাসায় এসে সোজা বিছানায়। মাকে বললো আমি অফিসে খেয়ে এসেছি।
পিয়াসা ও ওর রুমে কেমন এক হতাশা ওকে পেয়ে বসেছে। মাকে বললো পাত্র পক্ষকখন আসবে?
পিয়াসার মা বললো রাত আটটার পরে।
পিয়াসা আচ্ছা আম্মু ওরা আসার আগে আমি কি শিহাব কে একটু এক ঘন্টার জন্য বাসায় ডাকতে পারি?
পিয়াসার মা হ্যাঁ ডেকো।
পিয়াসা বললো আমি কিন্তু পার্লারে আজ যাবোনা। একেবারে হলুদের দিন যাবো। অগ্যতা মা আর কথা বাড়ালেন না। একটা লাল টকটকে জামদানী শাড়ি বের করলো পিয়াসা। বললো এটা পরবো। গত বছর পিয়াসার জন্মদিনে শিহাব দিয়েছিলো শাড়িটা।
মা বললো ঠিক আছে। আসলে পিয়াসা এতোটাই দেখতে সুন্দর ওর কোন সাজ মেকআপের প্রয়োজন হয়না।
বেলা দুইটার দিকে হঠাৎ অমিতের ফোন সুইডেন থেকে শিহাবের মায়ের কাছে।
অমিত; কেমন আছো নীলা?
নীলা; এইতো আছি। তো তুমি কেমন আছো?
আছি নীলা । আগামী মাসে হয়তো আমি বাংলাদেশে আসবো। তোমার তো মোটামুটি ঝামেলা শেষ আমাকে একটু সময় দিও। আমি তোমার শহরে এসে নিয়ে আসবো তোমাকে।
নীলা; আগে আসোতো। আজ সাত বৎসর হয় তুমি গিয়েছো অথচ একটাবার ও বাংলাদেশের কথা তোমার নীলার কথা কি মনে হয়না?
অমিত; আমর মনতো বাংলাদেশেই। নানা অসংগতির কারণে আসা হয়ে ওঠেনি। তবে আল্লাহ চাইলে এবার নিশ্চিত আসবো। তোমার কবিতার শ্যুটিং এ আমি থাকবো। তোমার লোকজনদের বলে দিও।
নীলা; আচ্ছা ঠিক আছে বলবো। এখন রাখছি কাল ফোন দিও।
অমিত; ভালো থেকো নিজের খেয়াল রেখো।
পিয়াসা ফোন করলো শিহাবের কাছে।
পিয়াসা; শিহাব কোথায় তুমি?
শিহাব; বাসায়
পিয়াসা; পাঁচটায় আসতে পারব?
হ্যাঁ আসছি।
পিয়াসা; আমি আম্মুকে বলে রেখেছি তুমি সোজা আমার রুমে চলে এসো। ওরা রাত আটটায় আসবে।
ঠিক আছে আমি একটু পরেই বের হচ্ছি। এখখন তাহলে রাখছি। বলেই শিহাব ফোন রাখলো।
শিহাব দ্রুত তৈরী হয়ে বাইকে বাজারের ভিতর গেলো বেলী ফুল কিনতে। অনেক খোঁজা খুঁজির পর এক জায়গায় অনেক গুলো বেলী ফুলের মালা কিনলো একটা হলুদ বেনারসি আর এক জোড়া কঙ্কণ নিয়ে পিয়াসার বাসার দিকে চললো। যাবার সময় কিছু মিষ্টিও নিলো। যেনো নতুন জামাই শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছে। অবশ্য শিহাব নিজের বিয়ের সময় কিছুই নিজ হাতে কিনে নাই।
ঠিক পাঁচটায় শিহাব এসে পৌঁছালো পিয়াসাদেল বাসায়। নিচে বাইক রেখে উপরে উঠতেই পিয়াসার মা সামনে পড়লেন। শিহাব পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে মিষ্টির প্যাকেট হাতে দিয়ে বললো মা আমি পিয়াসার সাথে একটু দেখা করবো।
শিহাবের মুখে হঠাৎ মা ডাক শুনে পিয়াসার মা যেনো কি এক সুখানুভব করলো পাঠককূল নিশ্চয়ই অনুমান করতে পেরেছেন।
শিহাব পিয়াসাল রুমের কাছে যেয়ে বেল দিতেই ভেতর থেকে দরজা খুলে দিলো পিয়াসা। যেনো স্বর্গের অপ্সরী ধরায় নেমে এসেছে।
শিহাব নিস্পলক তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিয়াসা ওর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেই শিহাব হাত ধরে উঠিয় বললো তোমার স্থান ওখানে নয় বুকে।
পিয়াসার দুচোখ ছলছল করে উঠলো।
শিহাব ওর থুতনি উঁচু করে বললো পাগলী আজ কাঁদতে নেই। আমি এসেছিনা?
অনেক না বলা কথা আর চাওয়া নিয়ে। তুমি পূর্ণ করে দেবে না সে চাওয়া।
পিয়াসা শিহাবের দুটি হাত ধরে বসালো ওর বিছানার পাশে।
পিয়াসা; বলো শিহাব
শিহাব তোমার হাত দুটি বাড়িয়ে দাও আগে। তারপর বলবো……..
চলবে……
পারভীন আকতার পারু – সহ সম্পাদক, চেতনা বিডি ডটকম।