ফাইলটা খুলতেই চোখে পড়লো দশলক্ষ টাকার একটা চেক। পিয়াসা চমকে উঠলো। মনে পড়লো মেডিকেল পরীক্ষায় চান্স পাওয়ার পরে তার বাবা তাকে দিয়ে বলেছিলো,
তোর এ্যাকাউন্টে রাখিস। জরুরি কোন প্রয়োজনে কাজে লাগাস।
আজইতো সেই সময়
শিহাব এলে দুজনে জমি দেখতে যাবে।
শিহাবের জমিতে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনে প্রথম এই টাকাটাই কাজে লাগাবে ওরা।
খুশির এক ঝলক পিয়াসার চোখেমুখে।
তখনও কি পিয়াসা জানতো এটাই তার প্রথম এবং শেষ অনুদান ঐ ট্রাষ্টি বোর্ডের জন্য!!
পরদিন শিহাব এলো।
মায়ের সাথে দেখা করে হাসপাতালের দিকে রওনা হলো। কেমন একটা বিষাদের ছায়া লেখিকা মায়ের চোখ এড়াতে পারলোনা।
হাসপাতালে ঢুকেই রাউন্ড শেষ করে পিয়াসাকে ফোন দিলো।
তুমি কোথায়?
আমি রাউন্ডে।
শেষ করে আমার রুমে আসো।
পিয়াসা রাউন্ড শেষ করে শিহাবের রুমে ঢুকেই দেখলো-
শিহাব চেয়ারে হেলান দিয়ে হেডফোনে গান শুনছে।
আসসালামুয়ালাইকুম।
শিহাব উঠে বসে ওয়ালাইকুমাসালাম।
বসো।
কি ব্যাপার পিয়াসা? তোমাকে বিমর্ষ লাগছে কেনো?
কই নাতো শিহাব। আজ আমি তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো।
কি? বলো
না এখনই না। আমাদের না আজ জমি দেখতে যিওয়ার কথা?
হ্যাঁ যাবো লাঞ্চ করে।।
ঠিক আছে তুমি লাঞ্ছ করে এসো। না পিয়াসা আমারা আজ খাবো। আম্মুকে বলে দিচ্ছি তুমিও বাসায় জানিয়ে দাও।
এরপর দুজনে লাঞ্চ করতে গেলো পাশের একটা রেষ্টুরেন্টে।
মুখোমুখি দুজন।
শিহার কিছু বলবে না?
পিয়াসা কি বলবো?
তোমার সারপ্রাইজ
পরে বলবো। আগে বলো জীবনের নতুন অধ্যায় কতোটা হৃদয়াঙ্গম করলে শিহাব?
আসলে তোমার কথায় এখন বলতে হয় রবিঠাকুরের শেষের কবিতার অমিতের সেই চিরন্তন সত্য কথা ” পিয়াসা তুমি আমার অগাধ জলের দিঘী, আমার মন সেখানে সারাক্ষণ সাঁতার দেয়।
আর তানিয়া সে আমার গড়ায় তোলা জল
যা আমার নিত্য প্রয়োজন ”
কথাটি যেনো অন্য ভাবে বুকে বিধলো আজ পিয়াসার।
সে বলে উঠলো
তাহলে তো আমাকেও বলতে হয়
“সে আমার মৃত্যঞ্জয়……
দুজনে নীরব রইলো কিছু সময়। এরপর খাবার খেতে খেতে অনেক কথা হলো।এলপর দুজনে বাইকে বেরিয়ে পড়লো। বিশ মিনেটে চলে এলো ওরা। দশ একরের জমিটা ওদের বেশ ভালোলাগলো। ঘুরে ফিরে দেখলো। জামিল সাহেবের নিজ হাতে লাগানো কিছু শাল সেগুন গাছ বেশ বড়ো উঠেছে। এক সাইডে পুকুর ভীষণ নান্দনিক একটা জায়গা। ঘুরেফিরে দেখার পর শিহাব বললো কাল ইঞ্জিনিয়ারেল কাছে যাবো। আর পরের দিন কয়েকজন ডাঃ এর সাথে পরামর্শ করে একটা কমিটি তৈরী করে ফেলবো।
পিয়াসা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েই ব্যাগ থেকে বের করলো ১৪-১২-১৫ তারিখের একটা সিগনেচার করা একটা চেক।
কি ব্যাপার পিয়াসা?
পিয়াসা সব খুলে বলতেই অঝোরে কেঁদে ফেললো শিহাব।
পিয়াসা, তুমি কাঁদছো কেনো শিহাব। আজ যে আমাদের বড়ো আনন্দের দিন। আমাদের দুজনের জন্য সৃষ্টিকর্তার অনেক আশির্বাদ। এমন খুশির দিনে কাঁদতে নেই।
ও আর হ্যাঁ শিহাব
মাকে বলে দিয়েছি পাত্র দেখতে। তবে ডাঃ ইঞ্জিনিয়ার বড়ো কর্মকর্তা না। ব্যবসায়ী পাত্র। শিহাব,কেনো?
না শিহাব আমার জীবনে তোমার সমকক্ষ কাউকেই বানাতে চাইনা। তুমি একজনই।
আর তাছাড়া জীবন আর কদিনের? মনই বা কয়টা?
শিহাব, এসব কি বলছো তুমি?
পিয়াসা,শিহাব চেকটা রাখো তোমার কাছে। যদি মরে যাই এই টাকাটা দিয়েই আমাদের স্বপ্নের ভিত্তি স্থাপন করো প্রথমে।
শিহাবের মুখে কোন কথা সরলো না। তাকিয়ে রইলো ওর নাক বরাবর।
চকচক করে উঠলো এক টুকরো হীরক!!
হঠাৎ একটা প্রাইভেট এসে থামলো…।.
চলবে….
পারভীন আকতার পারু – সহ সম্পাদক, চেতনা বিডি ডটকম।