সিরি দিয়ে ওঠার সময় রোজ লোকটার সাথে চোখাচোখি হয় তনুনিমার।লোকটা আড় চোখে তনুনিমাকে দেখে।তনুনিমাও আড় চোখে লোকটাকে দেখে। কোন এক রোমান্টিক গল্পের শুরুটা হয়ত এমন ভাবেই হয়।
দুই বছর পরের ঘটনা।
তনুনিমাকে তার মায়ের বাড়ির গেটে নামিয়ে দেয় বর অনুরুদ্ধ। দুজনার চোখমুখ থমথমে।সকালে বেশ একচোট ঝগড়া হয়ে গেছে বোঝাই যাচ্ছে।এবার হয়ত সেপারেশনটা হয়েই যাবে। গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে অনুরুদ্ধের দৃষ্টি আটকে যায় সিরির দিকে। অনুরুদ্ধ মনে মনে নিজেকে গালি দেয় গাধার মত কেনো যে তাকিয়ে থাকত সে ।
তনুনিমা সিরি বেয়ে উঠতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।কেনো যে কৌতুহলে লোকটার সাথে কথা বলতে গিয়েছিল।
ছয় মাস পরের ঘটনা।
অনুরুদ্ধ অফিস থেকে বেড়িয়েছে সবার পরে। কোন কাজেই তার তাড়া নেই।বাড়ি ফেরার তাগাদা দিতে কেউ কল করে অস্থির করে না অনেক দিন।একাকি বাসাটা কেমন গুমোট অভিমানে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে।
অন্ধকার বেলকনির এক কোণে কফির কাপ হাতে রাতকে ভোর হতে দেখাই যেনো আজকাল রুটিন হয়ে গেছে তার । অনুরুদ্ধ উদ্দেশ্যহীন ভাবে গাড়ি চালায়। ট্রাফিক সিগনেলে আটকে পড়া গাড়ির জানালার কাঁচে চোখ নামিয়ে টুকাই বাচ্চা মেয়েটার আকুতি ভরা কন্ঠে ফিরে তাকায় অনুরুদ্ধ। তার হাত ভর্তি বকুল ফুলের মালা। তনুনিমার খুব প্রিয় ছিল। তনুনিমা, আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই অস্পৃশ্য কোন এক অধরা হয়ে যাবে।বাচ্চা মেয়েটা আকুতি ভরা কন্ঠে অনুরোধ করেই চলেছে ” ভাইজান একটা মালা নেন। ভাইয়া….”
অনুরুদ্ধ দিধায় পরে যায়। বকুল ফুল কি এখনও তনুনিমার জন্য কেনা যায়?
তনুনিমা বেশ জমকালো সাঁজে সেজেছে আজ। ইচ্ছা করেই সেই শাড়িটাই পড়েছে, যে শাড়ি অনুরুদ্ধ প্রথম বেতন পেয়ে কিনে দিয়েছিল। কিছু বকুল ফুল পেলে বেশ হত।খোঁপা সাজানো যেতো।এত রাতে বকুল ফুলই বা কোথায় পায়?অনুরুদ্ধ ফিরতে কি আরও দেরি করবে?তনুনিমা সেই বেলকনিতেই অপেক্ষা করছে, যে বেলকনিটা শুধুই তাদের দুজনার।
আগামিকাল ওদের ডিভোর্স পেপারে সাইন করার কথা।অনুরুদ্ধ শেষ পর্যায়ে খুব করে চেষ্টা করেছে ডিভোর্সটা আটকানোর জন্য। কিন্তু তনুনিমার জিদ বড়ই ভয়ংকর।তাকে সিদ্ধান্ত থেকে টলানো কঠিন। কঠিন না হলে আজ অনুরুদ্ধের জন্য চমকটা থাকতো কোথায়?
সেলিনা রহমান শেলী- কবিও সাহিত্যিক।