অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। রুশার খুব ইচ্ছা করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। তার ঠান্ডার সমস্যা, বৃষ্টিতে ভেজা মানেই টানা সাতদিন যাবত জ্বর আর টনসিলে ভোগার জন্য প্রস্তুতি রাখা। তবুও তার প্রবল ইচ্ছে বৃষ্টিতে ভেজার, ইচ্ছেটা আসলে এ কারণেই, সে চায় তার জ্বর আসুক। জ্বর বাধানোর জন্য রাতে বেশ খানিকক্ষণ শাওয়ার ছেড়ে বসেছিল, এমনিতে অসময়ে শাওয়ার নিলে তার ঠান্ডা লেগে যায় অথচ এবার তার কিছুই হয় নি তাই সকালে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সে মহাখুশি। কিন্তু সমস্যাটা হল শায়লা বেগমকে নিয়ে। তিনি হলেন রুশার মা। পেশায় একজন শিক্ষিকা। কলজে পড়ান। তিনি তার মেয়েকে কিছুতেই বৃষ্টিতে ভিজতে দিচ্ছেন না।
রুশা বাংলা বিভাগে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। রোহানের সাথে তার টানা দুই বছরের সম্পর্ক। রোহান ও তার সেম ইয়ার। এই দুইবছরে যতবারই ঝগড়া হয়েছে রুশা কোন না কোন কান্ড বাধিয়েছে। অথচ কোন ঝগড়াতেই রোহানের কোন দোষ থাকে না। রুশা নিজেই ঝগড়া বাধায়, নাম্বার ব্লক করে আর কোন না কোন পাগলামি করে।
সেদিন রাতেও তার কোন ব্যাতিক্রম হয় নি। অতি সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাধিয়েছে ফোন অফ করে রেখেছে। রোহানের ভুল এতটুকুই সে অপরিচিত এক মেয়ের কমেন্ট রিপলাই করেছে। অথচ রুশা খুব ভাল করেই জানে এতে সন্দেহ করার কিছুই নেই, রোহান তাকে পাগলের মত ভালোবাসে আর এর প্রমানও সে এই দুইবছরে দিয়েছে।
এদিকে বৃষ্টি কমতে শুরু করেছে তা দেখে রুশার মেজাজ আরও খারাপ হল। এবার মনে মনে ভেবে নিল আবার বৃষ্টি শুরু হলে পিছনের দড়জা দিয়ে ছাদে চলে যাবে যেন তার মা দেখতে না পায়।
শায়লা বেগম চুলায় ভূনা খিচুড়ি বসিয়েছেন সাথে গরুর মাংসের ঝাল ভূনাও। রোহানের খুব পছন্দের খাবার। তিনি জানেন রোহান একটু পরই আসবেন। এই দুই বছরে তিনি এসব দেখে অভ্যস্ত। তাদের সম্পর্কের প্রথম থেকেই শায়লা বেগম সব জানেন। রুশা নিজেই জানিয়েছে। শায়লা বেগম ভেবেছিলেন তার এই মেয়ের সম্পর্ক বেশিদিন টিকবে না, কেন নয় রুশা প্রচন্ড বদমেজাজি। মেয়েটা আগে এমন ছিল না। রুশার বাবার সাথে শায়লা বেগমের ডিভোর্সের পর থেকেই মেয়েটার মাঝে এই অদ্ভুত পরিবর্তন, হয়ত তার বাবা নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে তার মাকে ছেড়ে চলে যাবে এমন একটা কাজ সে গ্রহন করতে পারে নি।
রোহান কখনো রুশার পাগলামিতে এতটুকুও বিরক্ত হয় নি, শুধু মাঝে মাঝে ভয় হয় এমন পাগলামিতে কখন বড় কোন অঘটন ঘটে যায়। সে রুশাকে প্রচন্ড ভালোবাসে আর সে জানে রুশাও কখনো তাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
আবার বৃষ্টি শুরু হল। রুশা পিছনের দড়জা দিয়ে ছাদে চলে গেল। বৃষ্টির জলে দুহাত ছড়িয়ে দিতেই রোহান এসে রুশার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“চল আজ না হয় দুজন একসাথেই বৃষ্টিতে ভিজি আর দুজনের একসাথেই জ্বর আসুক”
সমস্ত আকাশের মেঘগুলো তাদের ভালোবাসা যেন ঢেলে দিল বৃষ্টির জলে। পৃথিবীর দুইজন সুখী প্রেমিক-প্রেমিকা আজ একসাথে বৃষ্টিতে ভিজছে। সেই বৃষ্টির জলে কোন অসুখ থাকতে পারে না শুধু থাকবে ভালোবাসা।
অসুখ থাকাটা যেন বড্ড নীতিবিরোধী কাজ হবে। চারদিকে কেবল ভালোবাসা আর ভালোবাসা….।
আরফিন সুপ্রভা (মনিকা)-মডারেটর চেতনায় সাহিত্য