: আমি কিন্তু সংকোচ করছি, এভাবে সব বলে ফেলতে
হয় না।
: সামনে পেলে কলার চেপে বলতাম।
: আমি সেদিন শার্টই পরবো না।
: তবে টিশার্ট ছিঁড়ে ফেলবো।
: টিশার্ট পরবো না।
: খালি গায়ে আসবেন?
: পাগল নাকি?
: আমার কোনও সমস্যা নেই, আসতেই পারেন।
: গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল!
: ভারী কথার পটু তো আপনি!
: মারতেও পটু।
: মারবেন?
: ছেড়ে দেবো এটাই বা ভাবলেন কী করে?
: আমি তো চাই-ই না ছাড়ুন।
: বয়স কতো?
: মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই।
: এবার মেজাজটা গরম হচ্ছে কিন্তু
: হুম দেখছি, ডিম সেদ্ধ হবে।
: ফোনের ওপাশ থেকে দেখছেন?
: চোখ বুঁজলে মন সব দেখে।
: আর কী দেখা যায়?
: জোছনা রাতে আপনি আমার সামনে বসে গান
গাইছেন আমি শুনছি!
: গান এত সস্তায় গাইনা।
: কী! আমি সস্তা?
: আরে না না- আমি তা বলিনি! এতো দেখছি
মহাবিপদ!
: বিপদ আসলে সাহস রাখতে হয়।
: আচ্ছা? কী বিপদ শুনি?
: এই ধরুন প্রতিদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরতে একটা গিফট হাতে ফিরবেন। সাথে একটা গোলাপ ও একটা চুমু। প্রতিটি ছুটির দিনে ঘুরতে-টুরতে নেবেন, মাঝেমধ্যে সিনেমায়। আর সপ্তাহে দুইদিন আপনি রান্না করবেন। আমি ঘুমিয়ে গেলে মশারী টাঙাবেন- আমার জ্বর হলে বুকে নেবেন ইত্যাদি। এই যাবতীয় বিপদের জন্য প্রস্তুতি নিন।
: ওরে বাব্বাহ! এত-এত বিপদ জেনেও কেনো আমি
সেদিকে পা রাখবো শুনি?
: কারণ গতকাল আপনি ও আপনার ফ্যামিলির সবাই
আমার আঙুলে রিং পরিয়েছেন। এখন বিয়ে যেহেতু
করবেন তার জন্য আগাম সতর্কসংকেত জানানো
হলো!
: দেখেশুনে কি তবে জল্লাদির গলায় পড়লাম!
: কী বললেন? এই কী বললেন?
: আপনার কণ্ঠটা এত মিষ্টি!
: ইশ্ চাপাবাজ একটা! কথা ঘুরিয়ে দিলো!
ঐশীর সাথে তাপসের হওয়া একটি কথোপকথন এভাবেই বারবার ঐশীর মনে আসতে থাকে। আনমনে সে বিড়বিড় করছিলো যখন এসব ভেবে, তখনই তাপস ডাক দিলো;
: ঐশী!
: হুম! (চমকে উঠে)
: কী ভাবছো এত নিবিড় চিন্তায়?
: আমাকে রিং পরানোর পরের সময় গুলোর কথা।
কী এক উন্মাদিনী হয়ে ছিলাম আপনার সাথে
মিষ্টি-দুষ্টু একটা সংসার পাতবো বলে!
: মন খারাপ করো না!
: না তো, মোটেও মন খারাপ করিনি! ভাগ্যকে দোষ
দিয়ে দিব্যি বেঁচে আছি।
: নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে!
: আমার জন্মতিথি মাঙ্গলিক, আর কোনও
পিতা-মাতাই চায় না একটা মাঙ্গলিক মেয়েকে ঘরে
এনে তাঁদের সন্তানের অমঙ্গল টেনে আনতে। এটাই
হবার ছিলো!
: আমার বাবা-মা জ্যোতিষশাস্ত্রে খুব বিশ্বাসী।
জন্মকুণ্ডলী মেলাতে গিয়ে তারা যখন জানলেন তুমি
মাঙ্গলিক, তখন কোনওভাবেই আর মানাতে পারিনি।
: কেনো তবে সবকিছু চূড়ান্ত হবার আগেই যাচাই
করেননি আমার জন্মতিথি কুলক্ষুণে কি-না?
: ঐশী!
: কারও বিশ্বাসকে আমি ছোটো করছি না, কিন্তু আমার
একটা প্রশ্নের জবাব দেবেন?
: বলতে থাকো..
: স্রষ্টার প্রতিটা সৃষ্টিই মঙ্গলময়, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানও
সৃষ্টির একে অন্যের কল্যানেই জন্ম। তবে
জ্যোতিষশাস্ত্রে মঙ্গলকে পাপগ্রহ ধরা হয় কেনো?
কেনোই বা জন্মকুণ্ডলীতে ঐ গ্রহের ছায়া থাকলে
নবজাতকটি হয় অলক্ষুণে? এই ভেদ-ভাউ আদৌও
কি সভ্যতা ও স্রষ্টার আশীর্বাদকে সম্মান করে, না-কি
ছোটো করে?
: ঐশী, এর উত্তর আমি জানি না!
: আমি জানি, আমার মত এমন হাজারও ঐশীর
পরিনাম হয় তো জীবিত লাশ– নয় তো আত্মহত্যা!
সৈয়দ ইমাম -কবি লেখক শিল্পী ও সংগঠক
~~