আমার একটা বন্ধু ছিল নাম অবিনাশ।
ছিল না বলে এখনও আছে বলা যায়,
একজনমের বন্ধুত্ব কী এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়?
স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে যখন দু’একটা সিগারেটের টানে শুরু হলো কলেজ জীবন
সেখানেও আমরা একসাথেই থাকতাম,
ক্লাসের ফাঁকে কেন্টিনের পেছনে চলত সিগারেটের লম্বা টানে আমাদের আড্ডাবাজি।
অতঃপর একদিন আমাদের সিগারেটের বিস্তর ধূয়ার জাল
ভেদ করে হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়াল নীরা।
আমার সেদিন একমুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল
একটা পরী আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে
সাদা শুভ্র ঠিক যেন কাশফুলেদের মতো।
তারপর আরও কয়েকবার নীরা আর আমার
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হয়েছে ক্যান্টিনের টেবিলে,
লাইব্রেরীর কর্ণারে, কলেজের ছাঁদে,
মোড়ের কদমগাছের পেছনে।
পাঁচ টাকার চা, দশ টাকার ঝালমুড়ি
আর পাঁচ টাকার বাদামে আমাদের সময়গুলো ভালোই কাটত।
হয়ত তাই নীরাকে পেয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম
আমার একটা বন্ধু ছিল
যে এখনো আছে।
পরদিন অবিনাশের খোঁজে তার বাড়ি গেলাম
সেখানেই অবিনাশ গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে
বাগানের আগাছা পরিষ্কার করছে।
আমাকে দেখে অবিনাশ উঠে দাঁড়াল
বলল, জানিস স্বরজিৎ ঐযে সেদিন
কেন্টিনের পেছনে
নীরা নামের মেয়েটি এসে দাঁড়িয়েছিল
আমাদের সামনে,
তারপর থেকে একটা রাতও আমি ঘুমাইনি!
অথবা বলতে পারিস আমাকে ঘুমাতে দেয়নি নীরা।
চোখের সামনে ঐ মুখটা ভাসলেই বুকের বাম পাশটায় কেমন যেন করে ওঠে,
প্রথম প্রেম বুঝি এমনই হয়!
তারপর একটা ক্ষীণ হাসি দিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে অবিনাশ বলল
ও তুই বুঝবি নারে স্বর্… ওসব ভালোবাসার মানে বুঝা তোর কাজ নয়।
কী যেন কোথায় থেকে এক ঠান্ডা বাতাস এসে আমাকে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল
সেই ঠান্ডা বাতাসে কেঁপে উঠলো
আমার শরীর, মন এমনকি হৃদপিণ্ডটাও!
সে বাতাস আমাকে ঠান্ডায় জমিয়ে দিয়ে গেল
মানুষ মরে গেলে যেমন করে
ঠান্ডা হয়ে শক্ত হয়ে যায়, তেমনটাই।
তারপর বহুবছর কেটে গেছে চেনা সেই শহর ছেড়ে
অচেনা এই কোনো এক শহরে
যেখানে নীরা নেই, অবিনাশ নেই, আমার আগের আমিটাও নেই।
কাজের ফাঁকে যখন নিজেকে একা লাগে খুব
মনে পড়ে যায় আমার একটা বন্ধু ছিল,
একটা খুব কাছের মানুষ ছিল, যারা আজো আছে।
অবিনাশ বন্ধু আমার ভালো থাকিস
ভালো থেক নীরা।
শিউলী আচার্য্য – কবি ও সাহিত্যিক।