রহমতের সওগাত নিয়ে প্রতি বছর আমাদের মাঝে আসে রমজান আর সেই রমজান মাসের শেষ দশদিনে লুকিয়ে থাকে মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুলকদর। রমজানের শেষ দশদিনের বিজোড় রাতগুলোর যে কোন একটি লাইলাতুলকদর। আল্লাহতায়ালা চান আমরা এই রাতটি অনুসন্ধান করি। তাই শেষের প্রতিটি বিজোড় রাতেই আমাদের ইবাদতে মসগুল থাকা উচিত। আমরা যদি ২১,২৩, ২৫, ২৭ এবং ২৯ তারিখ রাতেই আল্লাহর দরবারে ধরনা দেই তার মহিমান্বিত রজনীর রহমত পেতে, তাহলে নিশ্চয়ই তিনি খুশি হবেন। হয়তো আল্লাহ তার বান্দার আন্তরিকতা লক্ষ করার জন্য এই রাতটি নির্দিষ্ট করার পরিবর্তে অস্পষ্ট রেখেছেন। কোরআনের বর্ননা অনুযায়ী এই রাতটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। দোয়া কবুলের এক বিশেষ সুযোগ। রমজান মাসের যে কোন তারিখেই এই রজনী হোক না কেন এ রাতযে নিশ্চিত এক মহিমান্বিত রাত এতে কোন ভুল নেই।
কদরের রাত এত সন্মানিত হওয়ার নির্দিষ্ট কিছু কারন রয়েছে।
১। এই রাতে কোরআন শরিফ নাযিল করা হয়েছে।
২। এই রাতের নাম স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুলকদর লাইলাতুল মুবারাকাহ রেখেছেন।
৩। এই রাতের ফজিলত ও মহত্ব হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
৪। এই রাতে সুর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে।
৫। এই রাতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারন করা হয়।
৬। এই রাতে একনিষ্ঠ ইবাদাতকারীর পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
৭। এই রাতে দোয়া কবুল হয়।
৮। এই রাতে অসংখ্য ফেরেস্তা ও জিব্রাইল (আঃ) পৃথিবীতে নেমে আসে এবং ইবাদতকারীদের ছালাম দেন, তাদের দোয়ার সাথে আমিন আমিন বলে থাকেন।
৯। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা ফেরেস্তাদের পয়দা করেন।
১০। এই রাতে জান্নাতে বৃক্ষ রোপণ করা হয়।
১১। এই রাতে আল্লাহর পদত্ত খেলাফত মহানবী (সাঃ) এর হাতে সোপর্দ করা হয়।
(সুবহান আল্লাহ)।
এই রাতে এতসব ঘটনা ঘটেছে বলেই এই রাতটিকে পরিপূর্ণ সন্মান ও শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কদরের রাত সমস্ত রাতের মধ্যে প্রধান ও শ্রেষ্ঠ।
আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, কদরের রাতটি হাজার মাস থেকে উত্তম। এই রাতে ফেরেস্তাগণ এবং জিব্রাইল (আঃ) তাদের প্রভুর অনুমতিক্রকে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হন। রাতটিতে সন্ধ্যা হতে সুভহে সাদিক পর্যন্ত শান্তি বর্ষিত হতে থাকে। (সূরা বাকারা)। সুবহান আল্লাহ।
আমাদের উচিত সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। কদরের রাত একটি বিশেষ রাত বলে এই রাতে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত লাভ করা উচিত। এই রাতে আমরা পূর্বের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা করে আমরা পাপমুক্ত হতে পারি। আখিরাতের জন্য নেকীর ভান্ডার ভারী করতে পারি। যে এই রাতকে অবহেলা করেছে সে হতভাগা। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , রমজান মাসে এমন রাত আছে যা হাজার মাস হতে উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রইল সে সম্পুর্ন বঞ্চিত রইল। (সুনানুন নাসায়ী- ২১০৬)
যে এই রাতে নিষ্ঠার সাথে ইবাদত করবে আল্লাহ তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে কদরের রাতে ইবাদত করে তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করা হয়। (বোখারী)।
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আসুন আমরা আল্লাহর কাছে কায়োমানে প্রার্থনা করি, তিনি পবিত্র রমজান মাসে আমাদের জন্য যে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত পবিত্র কোরআন পাঠিয়েছেন আমরা যেন সেখান থেকে উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। নিজেদের জীবনে সেই শিক্ষার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারি। যেন নিজেদের সন্তানদের কোরআনের শিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। এই আজকের কলুষিত সমাজকে যেন কোরআনের ছাচে গড়ে তুলতে পারি। আল্লাহর পথে কোরবানি হওয়ার যোগ্যতা যেন অর্জন করতে পারি।
প্রিয় পাঠক, আসুন আমরা আল্লাহর কাছে আরো পার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের তৌফিক দেন, আমরা কদরের রাতকে যেন আন্তরিকভাবে অনুসন্ধান করতে পারি এবং আল্লাহর ইবাদতে মসগুল থেকে তার অশেষ রহমত লাভ করতে পারি। আমিন
দিল আফরোজ রিমা –
কবি ও সাহিত্যিক