Take a fresh look at your lifestyle.

দোলাচল – ২

1,355

 

সকালে হাসানের মা দরজায় ডাকাডাকি করে— কিরে হাসান ওঠ, বেলা হয়ে গেছে উঠবিনা! কিসের ঘুম ঘুমাস। কিন্তু হাসানের কোন সাড়া নেই।
মায়ের ডাকাডাকি দেখে চাচীরা সব এসে গেল। সবাই বলাবলি করলো, না! ব্যাপারটা সুবিধার না নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল আছে। তাছাড়া এতো ডাকার পরও কেন সাড়া দেবে না। কি আর হবে দরজা ভেঙে দেখা গেল বিছানায় মরার মতো পড়ে আছে, পাশেই আছে বিষের বোতল। তাড়াতাড়ি সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে গেল। কই মাছের প্রাণ এত সহজে জান যাবার জন্য নয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলো শুনেছিলাম তাতেও রাজি ছিল না হাসানের বাবা-মা। অগত্যা সে গোপনেই বিয়েটা সেরে ফেলে ফেলে। পরে আস্তে আস্তে জানাজানি হয় এবং তারা মেনেও নেন।

বছর দু’য়েক ভালোই গেল—-
যেন স্বপ্নের মধ্যে বিতরণ করছিল তারা। মধুর বৈবাহিক সম্পর্কের বন্যা নিয়ে আসলো এক নরশিশু। এই স্বপ্ন যেন শেষ হবার নয়। অনেকের মনেই হিংসে জাগতো এদের ভালবাসা দেখে। কিন্তু কে জানতো এর শেষটা এমন হবে।
কোনটা লাভ আর কোনটা ইনফ্যাচুয়েশন এটা বোঝাটা কি এতই সোজা। এটা একমাত্র সময়ই বুঝিয়ে দেয়। হয়তো এটা ইনফ্যাচুয়েশন ছিল নীলা হয়তো লাভ ভেবে ভুল করেছিল।

আবার হয়তো দূরত্বটাই এদের সম্পর্কের মাঝে তৈরি করেছিল ধ্বংসস্তূপ। একটা চারা গাছ যেমন যত্নসহকারে পানি, আগাছা পরিষ্কারের মাধ্যমে বড় করতে হয় তেমনি যত্নসহকারে একটা সম্পর্ককেও আগলে রাখতে হয় যদি সেখানে এতোটুকু অবহেলা করা হয় তবে একটু চিঁড়ের আশঙ্কা থাকে আর চিঁড় ধরলে তা একসময় ভেঙে পড়ায় স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তেমনই এক আশঙ্কার সম্মুখীন হলো নীলা।

ছেলেকে নিয়ে মহা আনন্দে দিন কাটে গ্রামের বাড়িতে। শ্বশুর-শাশুড়ি আর একমাত্র ছেলে। সারাদিন রান্না খাওয়ানো এই নিয়েই মেতে থাকে।
মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে হাসান বাড়িতে আসে। একসাথে সুখের সময় কাটায়। একবার ঢাকায় নিয়ে ও গিয়েছিলো নাকি তাদের কিন্তু বেতনের স্বল্পতার কারণে টিকতে পারেনি। নীলা ও সবটা বুঝেছে তাই সে বাধ্য হয়েই থেকেছে। কে জানতো তার স্বর্গীয় সুখের অবসান এখানেই। হয়তো পরে আবার নিয়ে যেত কিন্তু তখনই শুরু হলো গৃহ কন্দোল। নীলা আবার মা হতে চলেছে। এটা হাসানসহ পরিবারের কেউ মেনে নিতে পারে নায়।
তারা চায় না এটা ঠিক কিন্তু নীলা মা হয়ে পৃথিবীর আলো দেখার আগে কিভাবে শিশুটিকে মেরে ফেলবে এটাও তো ঠিক। সেটা তো আগেই ভাবা উচিত ছিল দুজনার।

কিন্তু না সকল দোষ নীলার। সে শত বাধা অতিক্রম করে ও দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিল। কিন্তু হাসান তা মেনে নিল না। শুরু হলো সর্ম্পকের টানাটানি, দূরত্ব।
ঈদ বা কোন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি আসতো না। নীলা ও তার ছোট ছেলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতো। মা হয়ে তা সইতে পারতো না নীলা।

বাবা মা ছেলেকে তেমন শাসন করলো না। এতে সে বেপরোয়া হয়ে উঠলো। কলিগের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হল। এক কান দু ‘কান করতে করতে সবাই জেনে গেল এমনকি নীলাও। শুরু হলো প্রতিবাদ আর চলতে থাকলো নীলার ওপর শারীরিক- মানসিক নির্যাতন। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চললো এই নির্যাতন।
কত সইবে মেয়েটা। কিছু বললে শ্বাশুড়ি বলে, ভাত কাপড়ের তো অভাব নাই শ্বশুর সব কিনে দেয় তাহলে তার কিসের অভাব না হয় তার স্বামীই একটু কাছে আসে না।

এটাই বা কম কি। মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের কষ্ট বুঝলো না, হায় আফসোস! নীলা যখন তার শ্বশুর -শাশুড়িকে একত্রে দেখে তার কি ইচ্ছে করে না তার স্বামীর আদর পেতে। তারা সেটা বোঝেনা। হাসান বাড়িতে আসা কমিয়ে দেয়। আর আসলেও আলাদা ঘরে ঘুমায়। নীলা সেখানে গেলে অনেক মারধোর করে এটা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

 

রাজিয়া সুলতানা – সহ সম্পাদক চেতনা বিডি ডটকম।

Leave A Reply

Your email address will not be published.