একটা ক্ষেতে ফসলের গোড়ায় বাতাস চলাচল খুব জরুরী। সে বাতাস চলাচলের জন্য ফসলের ক্ষেতজুড়ে প্রকৃতির লাঙল হিসেবে কাজ করে ইঁদুর।
ইঁদুর ফসল বিনষ্ট করে। পাকা ফসল কেটে দেয়, সে কারণে ইঁদুরের আধিক্য কমাতে হয়। সে কাজটি করে সাপ এবং কিছু পাখি (যেমন- পেঁচা)।
সাপের অাধিক্য কমাতে সরাসরি ভূমিকা রাখে পাখি। চিল জাতীয় পাখির সাপ শিকার আমরা দেখে থাকি। ছোট পাখিরাও কিন্তু সাপ শিকার করে যেমন ল্যাঞ্জা কসাই (Shrike).
প্রকৃতির এই ফুড সার্কেল যে কী অসাধারণভাবে সাজানো ভাবতে গেলে বিস্ময়ের শেষ থাকেনা।
এবার ভাবুন উল্টো দিক থেকে। পাখি নেই, সাপের আধিক্য বেড়ে গেল কিংবা সাপ নেই ইঁদুরের আধিক্য বাড়লো অথবা ইঁদুর নেই ফসলের গোড়ায় বাতাস চলাচল করতে পারলো না। কী হবে তখন!
আপনি বলতে পারেন, কী আর হবে, এখন বিজ্ঞান কত উন্নত, ফসল নিড়িয়ে বাতাস চলাচল করাবে! হ্যাঁ, কৃষিতে সত্যিই প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। আগে ছোট ছোট কীটগুলোকে বড়রা খেতো। তারচেয়ে বড়দের পাখিরা খেতো। পাখির বিষ্ঠা ক্ষেতে পড়ে জৈব সার হতো। প্রযুক্তি এসে কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ায়, রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়াতে হয়েছে। ফসল উৎপাদন হয়তো বেড়েছে, সাথে সাথে খাদ্যে মানুষের বাঁচার উপাদান কি কমেনি? খাদ্যের স্বাদ কি নষ্ট হয়নি? খাবারের অস্বাস্থ্যকর উপাদান কি বাড়েনি?
উন্নত দেশগুলোতে ফসলের ক্ষেতে এখন কৃত্রিম উপায়ে পোকা মাকড় নিয়ে গিয়ে চাষ করা হচ্ছে। ক্ষতিকর পোকাগুলোকে ধ্বংসের জন্য উপকারী পোকা মাকড় ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে করে উৎপাদিত ফসলে পুষ্টিমান রক্ষা পাচ্ছে।
প্রকৃতির এই খাদ্যচক্র রক্ষার জন্যে সচেতনতা খুব জরুরী। আমাদের চারপাশে কমতে থাকা পাখির পরিমাণ রীতিমত আশংকাজনক। শুধুমাত্র শখের বশবর্তী হয়ে আমরা পাখি শিকার করি। নিজের শখ মেটাতে গিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে আমরা ভয়ানক ঝুঁকির মধ্যে রেখে যাচ্ছি।
শুধু যে পাখি শিকার করছি তা নয়। পুরাতন গাছপালা অপ্রয়োজনে কেটে ফেলছি। বাঁশ ঝাঁড় কেটে ধ্বংস করছি। নগরায়নের নামে প্রয়োজন ছাড়াও গাছপালা ধ্বংস করছি। পাখির বাসস্থান বিনষ্ট করছি এমন অহেতুক কারণে, যেগুলো ইচ্ছে করলেই এড়িয়ে যাওয়া যেতো।
পাখির বিষ্ঠা থেকে নদীর মাছের খাবার সংকুলান হতো। পাখি কমে যাওয়ায় নদীর মাছ কমেছে। এখন আর হাটে বাজারে নদী কিংবা হাওড়ের মাছের প্রাচুর্যতা নেই। পুকুরে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা মাছেই আমাদের ভরসা। নদীর পাবদা, আইড়, চিতল কতদিন পাইনা আমরা ভেবেছেন কখনো।
এখন পাখির সিজন চলছে। শীতের দেশগুলো থেকে জলচরা পাখিরা এদেশে আসছে। তারা এসময় মাছগুলোর জন্যে প্রচুর খাবার রেখে যায়। তাদের বিষ্ঠা জলজ উদ্ভিদের জন্যে সার হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করে। পাখি শিকার বন্ধ না হলে, পাখির নিরাপদ আশ্রয় রক্ষা না করা গেলে, এরা এদেশে আসা বন্ধ করে দিবে।
চলে যাবে নিরাপদ কোন দেশে।
পাখিবিহীন একটা দেশের কথা কল্পণা করা যায়! এমন একটি সকাল কল্পনা করা যায়, যে সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙবে না! আকাশের দিকে তাকালে, ডানা মেলা পাখি ছাড়া আকাশ দেখতে ভালো লাগবে আমাদের!
চলুন আওয়াজ তুলি। পাখির নিরাপদ পরিবেশ সংরক্ষণ করি আমাদের স্বার্থেই।
আমরা পাখির ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে নিজ নিজ টাইমলাইনে পাখি বিষয়ক পোস্ট দিই। স্যোসাল মিডিয়া অনেকক্ষেত্রে জনমত তৈরিতে সফল হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় এটাকে আমরা ব্যবহার করতে পারি।
আমরা যৌক্তিকভাবে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে, বিশেষ করে পাখির ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করি। নিজে লিখি। লেখার সময় করতে না পারলে অন্যের লেখা শেয়ার করি। তবু আওয়াজ তুলি চলুন। প্লিজ।
লেখা ও ছবি- আসাদুজ্জামান জুয়েল
আসাদুজ্জামান জুয়েল – ফটোগ্রাফার, লেখক ও গবেষক।