Take a fresh look at your lifestyle.

কলেজ আঙিনায় কিছুক্ষণ

810

 

সবুজ লালে ভরে আছে
কৃঞ্চচূড়ার ডাল
দোয়েল পাখি প্রশ্ন করে
সিক্ত কেন ভাল?

এইতো আছি আমরা কজন
কাব্য লিখি চল
মোদের কাছে পরান খুলে
মনের কথা বল।

হ্যাঁ সত্যিই কৃঞ্চচূড়ার প্রাঞ্জল সবুজ পাতার ফাঁকে লাল ফুলেরা যেন আমায় বলল, ‘চেয়ে দেখ চারিদিকে কত গাছ। সাজানো – গুছানো পরিবেশ। দু’ তিন ঘন্টা এখানে বসে থাকতে হবে বলে, সংসারের কাজে ব্যঘাত হলো বলে মন খারাপ করোনা। এইতো আমরা আছি, তোমার কবিতার ছন্দ। এনেছতো তোমার পদ্য লেখার খাতা। এনেছ তোমার ছন্দ গাথার কলম। ‘
আমি মনে মনে অনুভব করলাম প্রকৃতির এই সুন্দর আহবান।

আজ ছোট মেয়েটার কলেজের প্রথম দিন। মিরপুর ১০ নাম্বার থেকে আদমজী কলেজে আসা- যাওয়া, দু -তিন ঘন্টা বসে থাকা, আমার পক্ষে কঠিনই বটে। তবে আমি ব্যগে এক বোতল পানি, ছোট দু’ প্যাকেট বিস্কিটের সাথে একটি বই, আর খাতা কলম নিতেও ভুলিনি।
প্রথম দিনতো, ক্লাস শুরু হওয়ার এক ঘন্টা আগেই এসেছি। একটু দেরি হলেই রাস্তায় ভীষণ জ্যাম হয়। কলেজের গেটের বাইরে এক পাশে একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন জায়গা আছে। মেয়ে ভিতরে চলে যাওয়ার পর ওখানেই বসে পড়লাম। ইতিমধ্যে আরো অনেকেই জায়গা নিয়েছে ওখানটাতে।
সকালের বাদ পরে যাওয়া ওয়াজিফা পড়ে শেষ করলাম। সময় আছে ঢের। তাই আরো কিছু পড়ার সুযোগ হলো। ততক্ষণে কোমরটা ধরে এসেছে। আসলে মনের বয়স না বাড়লেও বয়স হয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় কোথায়। শরীরই মনে করিয়ে দেয়। যাহোক উঠে দাঁড়ালাম। সরু সুন্দর সাজানো – গুছানো ছোট পথটি বেয়ে স্কুল ক্যম্পাসের সামনে গেলাম। ওখানে বেশ বড় একটি ওয়েটিং রুম আছে। সাজানো চেয়ার,প্রচুর ফ্যন, এবং মোটামুটি পরিস্কার একটি বাথরুমও রয়েছে। হ্যান্ডওয়াসের ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে। মনে মনে বললাম আলহামদুলিল্লাহ , আল্লাহ বাচিঁয়েছেন।
বসে আছে অনেকেই। আমারো জায়গা হলো।
ব্যগ থেকে আবু হেনা মুস্তফা কামাল পিন্টুর লিখা সোনামুখি বইটি বের করলাম। পড়তে শুরু করলাম। কিছু দিন ধরে একটু একটু করে পড়ছিলাম বইটি। যেমন সময় পাই তেমন আরকি। বইটি পড়তে খুব ভালো লাগছে। লেখকের লিখার কি সুন্দর সাবলীল কারুকাজ। পড়তে পড়তে যেন সুখ অনুভব করছিলাম আর শিখছিলাম কিভাবে সাহিত্য লিখতে হয়। আসলে সাহিত্যের একটি খুব সুন্দর নিজস্ব রুপ আছে। যা মধুময় কল্পলোকের খুঁজ দিতে পারে। ভালবাসতে শিখায় অনায়াসে। পড়তে পড়তে কয়টা বাজে জানার তাগিদ টের পেলাম মনের মধ্যে। দেখলাম পৌনে বারটা বাজে। হঠাৎ ই চোখ পড়ল জানালার দিকে। দেখলাম খুব সুন্দর একটি গাছ। সুন্দর সবুজের মাখামাখি। মনে হলো গাছের সবুজ পাতারা যেন আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। বলছে, হলোনা তো তোমার কাব্য লিখা। ব্যগ থেকে বের করলাম বয়ে আনা নোট বুকটি, আর আমার খুব আদরের কলমখানা। কবিতাটা লিখতে আমার ১০ মিনিট সময়ও লাগেনি। কবিতার নাম- মন।
পাশ থেকে একজন বললেন, আপু সাহিত্য চর্চা করেন বুঝি।
আমি বললাম, – ঐ একটু আধটু।
ওনি আবার বললেন – আসলে আমি নাট্যকার এবং মিডিয়ার সাথে জড়িত, সাহিত্য ঘেসা আরকি তাই বুঝতে পারি।
আমার খুব ভালো লাগলো আপার সাথে কথা বলে। ওনার ছেলে এল, তাই ছেলের হাত ধরে বিদায় নিলেন আপা।
অন্য পাশের একজনের খুব ক্ষুধা পেয়েছে বলে মনে হলো। আমি ব্যগে বয়ে আনা ছোট দু’ প্যাকেট বিস্কিট থেকে একটি ওনাকে দিয়ে বললাম, আপা, আমিও ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না। নিন না খেয়ে নিন। ওনি খুশি হলেন।বললেন, তাহলে আপনাকেও একটি আপেল খেতে হবে।
না খেলে মন খারাপ করবো।
আমি আপেলটা নিয়ে ব্যগে রাখলাম। বললাম আপা, এখন করোনার সময় বাইরে বসে খাওয়াই ঠিক না। নিতান্তই কিছু না খেলে খুব খারাপ লাগবে তাই একটু বিস্কিট খেয়ে নেব।
দুটি বিস্কিট খেয়ে পানি খেলাম। একটু পরেই ছুটি হবে। তাই আবার সেই সুন্দর বাতাসে ভরপুর পথ বেয়ে কলেজ গেটের আঙিনায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ওখানে ১০ নাম্বারে থাকে এমন কয়েক জনের সাথে দেখা হলো। আলাপ হলো। আমি ওনাদের নাম্বার নিলাম।
ততক্ষণে মেয়ে চলে এসেছে। মেয়ের কলেজ শিক্ষক এবং নতুন বন্ধুদের খুব পছন্দ হয়েছে। কলেজের পরিচ্ছন্ন সুন্দর সাজানো গুছানো পরিবেশ পেয়ে সে খুব খুশি।
রওয়ানা হলাম বাসার দিকে। বাসায় ফিরে প্রাত্যহিক কাজের ঝামেলা সেড়ে গোসল, নামাজ, খাওয়া শেষ করে লিখাটা শেষ করলাম।

 

দিল আফরোজ রিমা- কবি ও সাহিত্যিক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.