Take a fresh look at your lifestyle.

নজরুল দর্শন -১(সংগৃহিত)

680

কবি কাজী নজরুল ইসলাম দুবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং তার এই দুটি পত্নীরই বাড়ি ছিল আমাদের বাংলাদেশের বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায়। নজরুল ছিলেন মূলত প্রেমিক কবি। প্রেম দিতে ও প্রেম পেতে তিনি সর্বত্রই ঘুরে বেড়িয়েছেন। নজরুলের প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল নার্গিস আসার খানম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ছিল আশালতা সেন ওরফে প্রমীলা।

কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের খান বাড়িতে ১৭ জুন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে নজরুল ইসলামের সঙ্গে নার্গিস আক্তার খানম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন নজরুল ইসলামের বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর (১৮৯৯–১৯২১ খ্রি.)। মূলত নার্গিস আক্তার খানম ছিলেন কুমিল্লার আলী আকবর খানের ভাগ্নী। আলী আকবর খান ছিলেন কলকাতার স্বনামধন্য পুস্তক ব্যবসায়ী। পুস্তক প্রকাশনা বিষয়ে আলী আকবর খানের সঙ্গে নজরুলের একটা নিবিড় সৌহার্দ্যপূণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এই সূত্র ধরেই আলী আকবর খানের সঙ্গে নজরুল কলকাতা থেকে কুমিল্লার দৌলতপুর গ্রামে চলে আসেন। নার্গিস অত্যন্ত ধার্মিক পরিবারের মেয়ে ছিলেন। কবি নজরুলের সঙ্গে নার্গিসের বিবাহ সম্পর্কে তার পিতা রাজি ছিলেন না। এমনকি নার্গিসের বড় ভাইরাও এ বিয়েতে অমত ছিলেন। পিতা ও ভাইদের অসম্মতি সত্ত্বেও মামাদের কথায় নার্গিস এ বিয়েতে সম্মতি দিয়েছিলেন। নজরুলের পক্ষ হয়ে কলকাতা থেকে এ বিয়েতে কেউই উপস্থিত ছিলেন না। কুমিল্লার বিরজা সুন্দরী দেবীসহ সেনগুপ্ত পরিবারের সবাই এ বিয়েতে যোগদান করেছিলেন। বিয়ে পড়িয়েছিলেন দৌলতপুর গ্রামের ছবু মোল্লার পিতা (তিনি অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন)। বিয়েতে ২০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়েছিল।

বিয়ের পরে নার্গিসের মামা আলী আকবর খান চেষ্টা করেছিলেন বর–কনেকে বেশ আনন্দ–ফুর্তিতে রাখা। তার জন্য তিনি এ বিয়েতে বিভিন্ন ধরনের গান–বাজনারও আয়োজন করেছিলেন। এই গানের অনুষ্ঠানে কুমিল্লা শহর থেকে একদল মহিলা শিল্পী এসেছিলেন। তারা আলী আকবর খানের বাসাতেই সবাই অবস্থান করেছিলেন। শিল্পীরা সর্বক্ষণ এই সদ্য বিবাহিত বর ও বধূকে বিভিন্নভাবে আনন্দ–ফুর্তিতে রেখেছিলেন। অনুমান করা হয়, এসব কারণেই রক্ষণশীল পরিবারের সদস্য নার্গিসের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। এই নার্গিস আক্তার খানমই ছিলেন নজরুলের প্রথমা পত্নী। প্রথম দিনেই এ বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে এবং তা নজরুলের জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবান্বিত করেছিল। এ বিয়েকে কেন্দ্র করে নজরুলের জীবনে ঘটে যায় এক বিষাদময় ঘটনা। একটা স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস। এ বিয়ে নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। নজরুল ইসলাম বাংলা ১৩২৮ সালের ৩ আষাঢ়, ১৭ জুন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিয়ের রাতে মতান্তরে পরের দিন সকালে বীরেন সেনকে সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লার সেনগুপ্ত পরিবারে চলে আসেন। ব্যক্তি জীবনে এতবড় হৃদয়বিদারক দুঃখময় ঘটনা সৃষ্টির পশ্চাতে নজরুলের মনে অন্য কোনো গভীর বেদনা কাজ করেছিল কিনা তা শুধু নজরুলই সঠিকভাবে বলতে পারবেন। পরে তার বহু কবিতায় ও বহু গানে এই দুঃখের দীর্ঘশ্বাস আমরা দেখতে পাই।

এ বিয়ে কেন ভেঙে গেল তা আজো রহস্যাবৃত। কেউ কেউ বলেন নজরুলের ছন্নছাড়া, ক্ষ্যাপা জীবনই এর জন্য দায়ী। কেউ বলেন নজরুলের প্রতি নার্গিস আক্তারের তাচ্ছিল্যই এ বেদনাদায়ক পরিস্থিতি ঘটিয়েছিল। আবার অনেকে বলেন বিবাহের সময় ২০ হাজার টাকা কাবিন হওয়ার পরেও শর্ত ছিল নজরুল ইসলাম নার্গিস আক্তারকে দৌলতপুর থেকে নিয়ে যেতে পারবে না। নার্গিস দৌলতপুরে তার মামার বাড়িতেই থাকবেন। এই শর্তই নজরুল ইসলামের অহমিকায় ভীষণভাবে আঘাত হেনেছিল। আবার অনেকে বলেন নার্গিস আক্তার খানমের মামা আলী আকবর খানের বিরাট স্বার্থান্ধতাই এ বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণ। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে নার্গিস আক্তার খানম ঢাকা শহরেই বসবাস করতেন।

পারভীন আকতার পারু-সহ সম্পাদক,চেতনা বিডি ডটকম 

Leave A Reply

Your email address will not be published.