কুষ্টিয়া শহরের স্বর্ণ পট্টিতে আমার অফিস। সেদিন সকালে এক কাণ্ড দেখে আমার তো চক্ষু চড়কগাছ। যারা সোনার গহনা তৈরি করেন সেইসব স্বর্ণকারদের পেশাবের এতোটাই কদর তা আগে বুঝি নাই। বিষয়টি জানার পর এনএস রোডের সোনা পট্টিতে আমার অফিস হওয়াটাকে সগর্বে এনজয় করছি।
সোনার কারিগরগণ যেখানে পেশাব করেন সেই স্থানটি সাধারণ মানুষের পেশাবের মতোই নোংরা ও ঝাঁজালো দুর্গন্ধ। কিন্তু রোজ সকালে একজন মহিলা পরিচ্ছন্ন কর্মী ঐ পেশাবের স্তর আংশিক মাটিসহ পরম যত্নে কেটে বড় এক গামলায় ভরে নিয়ে চলে যায়। দুদিন দেখার পর তৃতীয় দিন তাকে জিজ্ঞেস করি, কী গো দিদি, আপনি স্বর্ণকারদের পেশাব নিয়ে যান কেন? সে জবাব দেয়- এই পেশাব ও মাটি ছাকনিতে ঢেলে চালাচালি করলে সোনা পাওয়া যায়। আমি আবার প্রশ্ন করি- স্বর্ণকারদের পেশাব দিয়ে সোনা বের হয় না কি? দিদি হেসে বলে- না স্যার, তা নয়। ওরা যেখানে বসে গহনা তৈরির কাজ করে সেখান থেকে ওদের জামা কাপড়ে স্বর্ণের ছোট ছোট ভাঙা টুকরো ও মিহি অংশগুলো লেগে যায়। ওরা যখন পেশাব করতে বসে তখন সেখানে সোনার সেইসব অংশ তাদের শরীর থেকে ঝরে পড়ে।
তারপর দিদির সাথে আরও কথা বলে জানতে পারি, এইভাবে প্রতিদিন পেশাব ও মাটি ছাকনি দিয়ে সে এক আনা আধা আনা স্বর্ণ কুড়িয়ে পায়। সেই কুড়িয়ে পাওয়া স্বর্ণ বিভিন্ন সোনার দোকানে বেচে তার সংসার চলে। এমন অদ্ভূত পেশা সম্পর্কে জানতে পেরে দিদির প্রতি আমার শ্রদ্ধা গেলো বেড়ে। আর স্বর্ণের কারিগরদের দেখলেই মনে মনে ভাবি- এরা হোলো বিশ্বের একমাত্র পেশাদার যাদের পেশাবের সমান কদর আমার নেই। দুনিয়ার সবচেয়ে দামী মুত্র কেবল তোমরাই ত্যাগ করে থাকো।
এই ঘটনার পর থেকে কবি গুরুর ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’- এই কথার মর্মার্থ বুঝতে পারি।
রফিকুল্লাহ কালবী- কবি ও সাহিত্যিক।