বইয়ের নামঃচাঁদের পাহাড়
লেখকঃবিভূতিভূষণ বন্দ্যোপধ্যায়
কলমেঃমোঃআব্দুল্লাহ্ রিফাত
মূল্যঃএকশত ত্রিশ টাকা
চাঁদের পাহাড় সিনেমাটির সাথে আমার ছোটবেলা থেকেই পরিচয়।বেশ কয়েকবার দেখেছি।যতবার দেখেছি মনে হয়েছে আরেকটিবার দেখি।তো ছিনেমা দেখা এক কথা আর বই পড়া আরেক কথা,তাইতো বইটি সংগ্রহ করে নিলাম।
চাঁদের পাহাড় কিশোরদের উপযোগী উপন্যাস।তাই এর ভাষা সহজ এবং সরল।এর কাহিনী টা কাল্পনিক হলেও পটভূমি তে বাস্তবতা রয়েছে।উপন্যাসটিতে আফ্রিকার ঘন অরণ্যের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
উপন্যাসের নায়ক শঙ্কর আফ্রিকা তে নতুন রেললাইন বসানোর কাজে যান।সে একটা অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে।পরীক্ষা শেষে গ্রামে বসে থাকে,কোনো চাকরি পাচ্ছিল না।খেলাধূলায় খুবই ভালো ছিল।তার একটা শখ ছিল বই পড়া এবং রাজ্যের ম্যাপ ঘাঁটা।বই পড়ার সময় চাঁদের পাহাড় বইটি তার মনে জায়গা করে নেয়।সে রাতে এসব নিয়ে স্বপ্ন দেখতো।একদিন তার চাকরির একটা চিঠি আসে,সেটা পূর্ব আফ্রিকার নতুন রেলস্টেশনে।শঙ্করের বাবা চাকরি হওয়াতে খুব খুশি হন।
শঙ্করের সেখানে চাকরিতে গিয়ে প্রথম প্রথম ভালোই লাগতো।কিন্তু হঠাৎ করে সিংহের উৎপাত দেখা গেলো।শঙ্করের সেখানে একটা কেরানির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল।সেই বন্ধুকে সিংহ টা খুন করে ফেলে।শঙ্কর খুব কষ্ট পায়,সে এটার প্রতিশোধ হিসেবে নানা কলা কৌশলে সিংহ টাকে শেষ পর্যন্ত মেরে ফেলে।
শঙ্কর নতুন পদ পেয়ে নতুন একটা স্টেশনে আসে।সেখানে কুলি পয়েন্টসম্যান কিছুই নেই,সেই সব।জায়গাটা বেশ নির্জন ছিল।একদিন রাতে শঙ্করের গায়ের উপর একটা বিষাক্ত সাপ উঠে থাকে,কিন্তু বুদ্ধি এবং ভাগ্যের জোরে সে বেঁচে যায়।
শঙ্কর সেখানে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ছিল।এ কারণে সে গার্ডের কাছে একটা বন্দুক এবং কার্বলিক এসিড চায়।স্টেশনে জলের কষ্টের কারণে একটু দূরে গিয়ে তাকে জল সংগ্রহ করতে হতো।একদিন সে জল সংগ্রহ করতে গিয়ে একটা ইউরোপীয়ান অসুস্থ লোক দেখতে পায়।তাকে সে স্টেশনে নিয়ে গিয়ে অনেক কষ্টে সুস্থ করে তোলে।লোকটার নাম ছিল ডিয়েগো আলভারেজ।লোকটা শঙ্করকে চাঁদের পাহাড়ের বিবরণ দেন।
শঙ্করের বিবরণ টি শুনতে ভালো লাগে।দিন পনেরো পরে আলভারেজ সুস্থ হলে হলদে হীরের খনির উদ্দেশ্যে তারা চাঁদের পাহাড়ে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।পথে আসতে আসতে অনেক সমস্যা হলেও তারা সমস্যাগুলো কাটিয়ে সামনে চলতে থাকে।ম্যাপ দেখে দেখে তারা এগিয়ে যায়।মাসের পর মাস তারা চলতে থাকে তবুও পথ যেন শেষ হয় না।হঠাৎ তারা তিন আঙুলের একটা প্রাণী(বুনিপ)আগমনের লক্ষণ পায়।
যাত্রাপথে শঙ্করের বিদ্যাবুদ্ধি কম থাকলেও আলভারেজ তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দেন।কিন্তু গুরুর মতো শিষ্য তো কখনোই হতে পারে না।হঠাৎ করে একদিন বুনিপের আগমনে র আওয়াজ।শঙ্করের দূর্ভাগ্য যে বুনিপের আক্রমণে আলভারেজ এর মৃত্যু হয়।
শঙ্কর কিছুটা ভেঙে পড়লেও তার বুদ্ধির মাধ্যমে বুনিপকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করে।তার সবসময় মনে হয় সবার মতো আলভারেজের ও জানোয়ারটার হাতে মৃত্যু হলো।শঙ্কর ভেবে পাচ্ছিল না কি করবে।খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে সে ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে থাকে সে।পানির সন্ধান করতে করতে একটি গুহার ভেতরে এসে সে কোনোমতে পানি পান করে।
সে কিছুটা ভেঙে পড়লেও শক্ত হয়ে দাঁড়ায়।চলতে থাকে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে।হঠাৎ একদিন পানির সন্ধান করার সময় শঙ্কর আত্তিলিও গাত্তির নরকঙ্কাল পায়।সেখানে সে জুতোর মধ্যে চিঠি এবং কিছু হীরে পায়।নরকঙ্কালটি সে সমাধিস্থ করে।
অনাহারের কষ্টে এবং দূর্বাভাবনায় তার শরীরে শক্তি বলে কিছু থাকবে না।তারপরেও সে বীরের মতো চলতে থাকে।অবশেষে শঙ্কর কিছু হীরে নিয়ে ফিরে আসে।কিন্তু সে শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ ছিল।অবশেষে তাকে চিকিৎসা করে সুস্থ করা হয়।
তার এই খবর এবং ফটো কাগজে ছাপা হয়।শঙ্কর একজন বিখ্যাত লোক হয়ে যায়,কেউ ফটো নিতে আসে আবার কেউবা ভ্রমনবৃত্যান্ত কন্টাক্ট করতে আসে।সে চারখানি হীরে বিক্রি করে এবং দুখানা মাকে দেখানোর জন্য রেখে দেয়।
জন্মভূমির কোলে কিছুদিন থেকে আবার শঙ্কর রওনা দেয় আফ্রিকার উদ্দেশ্য।সে আবারও পূণর্বার অনুসন্ধানে বের হয়।
(এটা আমার জীবনের প্রথম বুক রিভিউ,ভুল ত্রুটি সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
আব্দুল্লাহ রিফাত- কবি ও ছাত্র – নাটোর।