পূর্ববর্তি পর্বতে খাদ্যাভ্যাসের যোগ-বিয়োগ সম্পর্কে কিছু তথ্য এবং পরামর্শ ছিল। যেসব সম্মানিত পাঠক পড়েছেন আশা করি তা গ্রহনযোগ্যতা আপনারাই যাচাই করবেন এবং আপনাদের সিদ্ধান্তই হবে এর ফলাফল।
খাদ্যাভ্যাসের আরো কিছু পরামর্শ রয়েছে যা আপনাদের জন্যে সবশেষের আলোচনায় থাকবে। তার আগে জেনে নেব ক্যাস্নারের সংক্ষিপ্ত বিবরন, এর প্রকারভেদ এবং এর পূর্বলক্ষন। আমার মনে হলো যে, এটিও জেনে নেওয়া ভালো ক্যান্সার আসলে কি? এটার প্রকারভেদ এবং এর প্রাথমিক লক্ষনসমূহ বা (Symptoms) কি কি হতে পা্রে? আমরা অনেক সময় অনেক বিষয়কে তুচ্ছ জ্ঞান করে অবহেলা করি এবং শেষতঃ নিজের জন্যে বা আপনজনের জন্যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করি। তাই এই ব্যাপার কিছুটা হলেও সাহায্য হবে আমার এই আলোচনায়। জীবনের কিছু অভিজ্ঞতাকে প্রকাশ করলে হয়ত অন্য কারো কাজে লাগতে পারে এই ভেবেই আমার এই প্রচেষ্টা। বাকি সব আল্লাহর হাতে এবং আপনাদের সচেতনতার উপর থেকে গেলো।
এখন জেনে নিই ক্যান্সার আসলে কী?
ক্যান্সার শব্দটাকে খাটি বাংলায় কি বলে সেটাও একটা কৌতুহল বা জানার আগ্রহ থাকতেও পারে। তাই এই নির্দোয় রোগটিকে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কর্কটরোগ বলে আখায়িত হয়েছে। অর্থাৎ ইংরেজি cancer শব্দটিকে বাংলাতে কর্কট রোগ বলতে পারেন। শব্দটা একদম সঠিক তাই না? আমরা সাধারণতঃ বদমেজাজি মানুষকে কর্কট মেজাজি বলে থাকি। সত্যিইত ক্যান্সার একটি বদ জাতীয় রোগ। এই বদ রোগটি মানুষকে ধরলে নির্ঘাত মৃত্য আর নাহয় ওর নিষ্ঠুর থাবা থেকে বেঁচে গেলেও তার কুফলগুলো ঐ ভোক্তভোগী অসহায় মানুষটি বহন করে বাকি জীবন যতদিন বেঁচে থাকবে। এবিষয়ে অবশ্য আগেই লিখেছি। এখন একটু দেখে নিই কি তার পরিচয়ঃ
বিশ্বের প্রাণীর সমস্ত শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারনভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। কিন্তু যখন এই কোষগুলো কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে কোন চাকা (Cyst) দেখা যায়, একেই টিউমার বলে। এই টিউমারগুলো কোনটি কম ক্ষতিকর (Benign) আবার কোনটি অতিসংক্রামক/তীব্র ক্ষতিকারক (Malignant) হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া দেহকলা্র অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে (Neoplasia)টিউমার বলে, এবং এরকম ক্রিয়া যুক্ত কোষকে নিওপ্লাস্টিক কোষ বলে। নিওপ্লাস্টিক কোষ আশেপাশের কলাকে ভেদ করতে না পারলে তাকে বলে নিরীহ বা বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমার ক্যান্সার নয়। নিওপ্লাসিয়া কলা ভেদক ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার, এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাযুক্ত কোষগুলিকে ক্যান্সার কোষ বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ পরিবর্তিত (ট্রান্সফর্মেসন) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাৎ প্রচুর ক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়। তবে বিনাইন টিউমার ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই এমন জোরালো নিশ্চয়তা নেই। আবার বিনাইন টিউমার সাদৃশ রোগ আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবশ্যম্ভাবী, এদের প্রি-ক্যান্সারও বলা যেতে পারে। বিনাইন অর্থাৎ নিরিহ টিউমার হলেও এটা দীর্ঘদিন শরীরে বাস করতে করতে এক সময় তার দূর্বল প্রভাব দিয়েও আশেপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। টিউমারএর স্থানান্তর (Metastasis)হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র (Lymphatic System) ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়। ঠিক কি কারণে ক্যান্সার হয় সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সাধারণ কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।
রওশন চৌধুরী- সহ সম্পাদক চেতনা বিডি ডটকম।