গত পর্ব শেষ করেছিলাম লিভার ক্যান্সারের বিভিন্ন কারন ও লক্ষণসমুহ আলোচনা দিয়ে। আজ কিভাবে এই ক্যান্সার সনাক্ত করা যায় তা নিয়ে একটু জানার চেষ্টা করবোঃ
কিভাবে সনাক্ত করা যাবে লিভার ক্যানসার? লিভার ক্যান্সার নির্ণয়ের সহজ উপায় একটি নির্ভরযোগ্য আল্ট্রাসনোগ্রাম। কখনও কখনও সিটি-স্ক্যানেরও দরকার পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে লিভার ক্যান্সার নির্ণয় করার জন্য আরও আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন এম.আর.আই.ও সিটি এনজিওগ্রামের দরকার পড়তে পারে। রক্তের এ.এফ.পি. পরীক্ষাটি লিভার ক্যান্সারের একটি মোটামুটি নির্ভরযোগ্য অনুসন্ধান পদ্ধতি। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত যে কোন ব্যক্তিরই উচিত প্রতি ৬ মাসে একবার এ.এফ.পি. ও আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা। তবে লিভার ক্যান্সারের ডায়াগনোসিস কনফার্ম করতে হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম এমন কি সিটি গাইডেড এফ.এন.এ.সি. জরুরি। চিকিতসকদের মতে, লিভার ক্যান্সার ভালো আশা রাখা যায় তবে তা অবশ্যই শেষের ধাপে নয়, সেটা হবে প্রথম ধাপে। শুরুতে ধরা পড়লে আর আকারে ছোট থাকলে অপারেশনের মাধ্যমে এই টিউমার লিভার থেকে কেটে বাদ দেওয়া যায়। পাশাপাশি আছে বিনা অপারেশনে টিউমার অ্যাবলেশন বা টিউমারকে পুড়িয়ে দেওয়া। আছে আরও কিছু আশা। যেমন এসেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর, কিন্তু অনেক কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কেমোথেরাপি জেলোডা ও সবশেষ সোরাফিনেব। সোরাফিনেব দিয়ে লিভার ক্যান্সারের রোগীদের নিয়মিতই চিকিৎসা হচ্ছে বলে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য চিকিসকরা আশ্বাস দিচ্ছেন। তাই লিভারের ক্যান্সারে সুস্থতার আশা শেষ হয়নি। কিন্তু রোগ সম্বন্ধে নিজে সচেতন না হলে চিকিতসকরা ব্যর্থ হবেন । একটাই পরামর্শ বা অনুরোধ যেসব উপসর্গগুলোর একটা মোটামোটি ভাল ধারনা এখানে দিতে পেরেছি এর যে কোনটি আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কারো, জানাশোনা, যারাই শোনেন না কেন অনুগ্রহ করে কাল বিলম্ব না করে দ্রুত যোগ্য এবং দক্ষ চিকিতসকের কাছে যান, খুলে বলুন আপনার সব উপসর্গের কথা। এতে অবহেলা করা মানেই নিজেকে হত্যা করার সমান। আর তখন ডাক্তারদের কিছুই করার থাকে না। শুধু লিভার কান্সার নয় যে কোন রোগে আক্রান্ত রোগীরা সচেতন কম থাকার কারণে মাত্র ৫ শত্যাংশ রোগী সময়মতো ডাক্তারের কাছে গিয়ে থাকেন। আর বাকিরা এমন পর্যায়ে চিকিতসার কথা চিন্তা করে্ন একদম শেষ সীমানায় এসে তখন ডাক্তারা কিছু করতে অপারগ হয়ে পড়েন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারদের অবহেলা ও লক্ষ্য করা যায়। অনেক ডাক্তার এসব Symptoms এর রোগীদের কেবল গ্যাস্টিকের ঔষধ এক বাক্স ধরিয়ে দিয়ে দিনের পর দিন রোগীর রোগ নির্ণয় না করে রোগীকে মৃতুর পথে ঠেলে দেন। তাই রোগীদের উচিত এমন ডাক্তারকে পরিবর্তন করে ভালো চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হওয়া।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাঃ লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধের চেষ্টার মধ্যে রয়েছে হেপাটাইটিস বি বিরুদ্ধে টিকাদান এবং হেপাটাইটিস বি বা সি দ্বারা আক্রান্তদের চিকিত্সা করা। দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগে আক্রান্তদের মধ্যে স্ক্রিনিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিত্সা বিকল্পগুলির মধ্যে শল্য চিকিত্সা, লক্ষ্যযুক্ত থেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যাবলেশন থেরাপি, এম্বোলাইজেশন থেরাপি বা লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ব্যবহার করা যেতে পারে। লিভারের ছোট ছোট গলদগুলি খুব কাছ থেকে অনুসরণ করা যেতে পারে। এছাড়া যেহেতু লিভার কান্সার একটি ভাইরাস জড়িত রোগ। যে সব ভাইরাসের কারণে লিভার ক্যান্সার আক্রান্ত সেই সব ভাইরাস প্রতিরোধ করা গেলে লিভার ক্যান্সার কমে আসবে। যেমন বি ভাইরাস, সি ভাইরাস, বি ভাইরাস ছোট বেলায় টিকা দিলে মুক্তি মেলে। সি ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই যখন মানুষ রক্তদান করবেন বা ইনজেকশন নিবেন নতুন সিরিঞ্জ নিয়ে রক্ত নিতে হবে এবং দিতে হবে। রক্তদাতার রক্ত নেবার আগে তার রক্তে কোন ভাইরাস আছে কিনা তা ভালো করে পরখ করতে হবে। তানা হলে জীবন বাঁচাতে যেয়ে জীবনকে হত্যা করা হবে। তাই একটু সচেতনভাবে যদি জীবন চলে তাহলে অবশ্যই লিভার ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বাকি সব আল্লাহর হাতে।
আজ এপর্যন্ত লিভার ক্যান্সার কি? কি কি উপসর্গ? কিভাবে বুঝবেন? এর চিকিৎসা পদ্ধতি এবং সচেতনতা নিয়ে যতটুকু সম্ভব জানার চেষ্টা করা হলো ।পরবর্তিতে অন্য কোন ক্যান্সারের আলোচনা নিয়ে আসার ইচ্ছা রেখে সবার জন্যে মঙ্গল কামনা এবং আমার জন্যে দোয়া চেয়ে শেষ করলাম।
রওশন চৌধুরী- সহ সম্পাদিকা চেতনা বিডি ডটকম।