গত পর্ব শেষ করেছিলাম লিভার ক্যান্সারের কারণ নিয়ে কিছু আলোচনা করে। আজ এর বাকিটুকু দিয়ে শুরু করবো।
ডায়াবেটিস ও ধূমপানঃ লিভার ক্যান্সারের জন্য ডায়াবেটিস এবং ধুমপান কিংবা ধুয়া বিহীন তামাক জাতীয় খাবার যেমন সাদা পাতা, জরদা এসব খুবই বিপদজনক কারণ। ডায়াবেটিস এইচসিসির ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপায়ী এবং পূর্বে ধূমপান করতেন, সাদা, জরদা দিয়ে পান সুপারি খাওয়া এমন ব্যক্তিদের এইচসিসির জন্য ঝুঁকি বেশি থাকে। লিভার ফ্লুক ইনফেকশন চোল্যানজিও কার্সিনোমা হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এবং জানা যায় এই কারণেই থাইল্যান্ডে এই ক্যান্সারের হার বেশি।
জন্ডিসঃ জন্ডিস কোনো রোগ নয়, কিন্তু এটা লিভার রোগের উপসর্গমাত্র। রক্তে বিলিরুবিন নামক উপাদান স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে গেলে চোখ ও প্স্রাব সবাভাবিকের চেয়ে অনেক হলুদ দেখা যায়। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ৫ হলে স্বাভাবিক কিন্তু ২৫ পর্যন্ত হলে তা খারাপ। তবে শুধু বিলিরুবিন এর মাত্রা থেকেই লিভারের অসুখ হয় সেটা ভাবাও ঠিক না আরো অনেক কারণেও জন্ডিস হয়ে থাকে। শিশুদের লিভার ক্যান্সারের কারণ প্রায় একই, তবে শিশুদের লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার কারণ হতে পারে বেকউইথ – উইডিম্যান সিনড্রোম (হেপাটোব্লাস্টোমা সম্পর্কিত), হেপাটোব্লাস্টোমা শিশুকালের সবচেয়ে সাধারণ লিভার ক্যান্সার, যদিও এটি মিলিয়নে মাত্র 2 থেকে 3 জনকে প্রভাবিত করে। এটি প্রথম তিন বছরের বাচ্চাদের প্রভাবিত করে এবং সাধারণত পেটের ভর হিসাবে উপস্থাপন করে যা ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
এই টিউমারগুলির একটি বড় শতাংশ অকাল জন্মগ্রহণকারী শিশুদের মধ্যে ঘটে। টিউমারটি অস্ত্রোপচার অপসারণের মাধ্যমে নিরাময় করা যায়। যদি লিভারের ভিতরে এই টিউমারটির আকার এবং অবস্থানের কারণে সার্জিকাল অপসারণটি বিপজ্জনক হয়। তবে লিভারের প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এখনও নিরাময় সম্ভব।
লিভার দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। যার কাজ হলো দেহে প্রবেশ করা টক্সিন বা বিষ বর্জ্যে রূপান্তরিত করা। যে বর্জ্য পরে মলের (Stool) সঙ্গে বের হয়ে আসে। আর এটা খুবই জরুরি একটি কাজ। কেননা খাদ্যের সঙ্গে আমাদের দেহে প্রচুর পরিমাণে টক্সিন প্রবেশ করে। তাই জীবনের জন্যে নির্ধারিত এই অতি প্রয়োজনীয় অঙ্গটির বিষয়ে আমাদের শিশু কাল থেকে অনেক যত্নশীল ও সচেতন থাকা খুবই জ্রুরী। লিভার ক্যান্সারের আরো অনেক তথ্য সম্বলিত কারণগুলো না বলে শেষ করা যায় না বলে মনে করি, যেগুলো হচ্ছেঃ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিভারের কর্ম ক্ষমতা কমে আসতে থাকে। অথবা কোনো ভাইরাস বা রোগের কারণেও লিভারের কার্যক্ষমতা কমে আসে। ফলে দেহ থেকে যথাযথ ভাবে টক্সিন বের করে দেওয়ায়ও অক্ষম হয়ে পড়ে সেটি। তখন এসব ক্ষতিকর টক্সিন চর্বি হিসেবে পেটে জমা হয়। লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে ফ্যাটি লিভার রোগ সৃষ্টি হতে পারে। লিভার প্রাকৃতিকভাবেই একটি চর্বিবহুল অঙ্গ। আর লিভারে সব সময়ই কিছু না কিছু চর্বি থাকা উচিত।
ফ্যাটি লিভার রোগ হয় তখনই যখন লিভারের চর্বি এর নিজের মোট ওজনের ৫% থেকে ১০% বেশি হয়। যখনই একজন মানুষের লিভার টক্সিন নিঃসরণে ভালো মতো কাজ করবে না তখন আপনি ওজন কমানোর জন্য যতই কম ক্যালরি খান না কেন বা যত বেশিই শরীরচর্চা করেন না তাতে কোনো কাজ হবে না।
লিভারই মূলত চর্বি হজমের কাজ করে। আর যখন এটি ঠিক মতো কাজ করবে না তখন চর্বিগুলো অন্ত্র থেকে পিত্ত হয়ে ফের লিভারে এসে জমা হবে।
তাহলে একটু জেনে নেওয়া যাক লিভার ভালো না থাকার আরো কিছু শীর্ষ উপসর্গগুলো কী কী?
হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া: লিভার যেহেতু চর্বি হজমের জন্য প্রধানত দায়ী সেহেতু এটি যথাযথ ভাবে কাজ না করলে দেহে চর্বি জমতে থাকে। যার ফলে বর্ণনাতীত ভাবে অকারণে ওজন বাড়তে থাকে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।
পূর্বেই বলেছি লিভারের বিষয়টি খুব দীর্ঘ তাই আগামী পর্বেও থাকছে এ বিষয়ের অরো বেশ কিছু জানার চেষ্টা। ততক্ষণে সময় করে আজকের পর্বটি পড়ুন এবং অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন। লেখাটি শেয়ার করুন। সবাই ভালো থাকুন এবং মহান সৃষ্টি কর্তাকে স্মরণ করুন। নিজেকে সুস্থ রাখতে সতর্ক থাকুন ।
রওশন চৌধুরী- সহ সম্পাদিকা চেতনা বিডি ডটকম।