গত পর্ব শেষ করেছিলাম গলার ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে আমাদের কি কি করতে হবে আজ এর বাকি অংশ এবং ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে আলোচনা করা হবেঃ
আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, আমি কোন চিকিতসাবিজ্ঞানী কিংবা চিকিতসক নয়। আমি অতি সাধারন একজন ভুক্তভোগী মানুষ। আমার জীবন থেকে নেয়া কষ্টের অভিজ্ঞতা থেকে এবং যখন যেখানে এবিষয়ে আলোচনা বা সেমিনারে যোগ দিয়ে এসব বিষয়ে আলোচনা শোনার সুযোগ পেয়েছি সেখানে যোগ দিয়েছি, নিজের আত্মীয় যারা এই রোগের উপর বিশেষজ্ঞ চিকিতসক এবং আমার চিকিৎসা যেসব ডাক্তার করেছেন তারা কেউবা বাংলাদেশের কেউবা ভারতের আবার কেউ কেউ আমেরিকার অথবা অন্য দেশের, তাদের কাছ থেকে জানা এবং অনেক সময় ব্যয় ও চিন্তা করে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের লিখা বইগুলো ঘেটে ঘেটে বিষয়গুলোই আপনাদের জন্যে শেয়ার করছি। এর উদ্দেশ্য একটাই আমরা সবাই যেন যতদিন বাঁচব ততদিন চেষ্টা করবো সুস্থ্য থাকার। বাকি সব রয়ে গেল পরম করুণাময়ের হাতে। আর একটি পরামর্শ বা অনুরোধ যাই মনে করেন, তা হলো পূর্বের পর্বে যেসব লক্ষণের কথা বলেছি সেই লক্ষণঙ্গুলো দেখা দিলে অবশ্যই অবহেলায় সময় ক্ষেপন না করে চিকিৎসকের সরণাপন্ন হন। খোঁজে নিন একজন অভিজ্ঞ চিকিতসককে। প্রয়োজনে একাধিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, ভালো চিকিৎসকের উপযুক্ত চিকিৎসা ধারা এমন রোগ থেকে যেসব রোগী সুস্থ্য হয়ে এখনো বেঁচে আছেন তাদের কাছ থেকে জানুন কোথায়, কিভাবে, কেমন এবং কোন চিকিৎসকের চিকিৎসা তারা নিয়েছেন। কি কি তারা অনুসরণ করছেন। কি কি পরামর্শ চিকিৎসকরা চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে তাদেরকে দিয়েছেন, এসব বিষয় জানতে রোগীর একার পক্ষে সম্ভব হবেনা হয়ত। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশি বা সহকর্মী, বন্ধু বান্ধব এতে সাহায্য করুন। এ গেলো গলার ক্যান্সারের বিষয়। সংক্ষেপে আমার জানা বিষয়গুলো শেয়ার করলাম। আজ ব্লাড ক্যান্সার (রক্ত ক্যান্সার) দিয়ে শুরু করি।
ব্লাড ক্যান্সার বা রক্তকোষে সৃষ্ট ক্যান্সারঃ আসলে লিউকেমিয়াকেই ব্লাড ক্যান্সার বলা হয়। এটি এক ধরণের ক্যান্সার যা রক্তে সঞ্চালিত কোষগুলিকে প্রভাবিত করে। এটি হলো রক্তকোষের ক্যানসার, বিশেষত শ্বেত রক্তকণিকার ক্যানসার। রক্তকোষ তৈরি হয় বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জায়, তারপর ধাপে ধাপে পরিপক্ব বা পরিণত হয়ে অবশেষে এটি রক্তে আসে। যদি কোনো কারণে অতিমাত্রায় ও অস্বাভাবিকভাবে এই রক্তকোষ তৈরি হয়, তাহলে সেগুলো পরিপক্ব হতে পারে না। এতে প্রচুর অপরিপক্ব ও অস্বাভাবিক রক্তকোষ রক্তপ্রবাহে চলে আসে। মূলত শ্বেত রক্ত কণিকাই বেশি আক্রান্ত হয়। কিন্তু ক্রমে অস্থিমজ্জা পুরোপুরি আক্রান্ত হওয়ার কারণে রক্তের অন্যান্য কোষের অভাবও দেখা দেয়। বিভিন্ন ধরণের লিউকেমিয়া রয়েছে এবং তাদের মধ্যে কিছু তীব্র লক্ষণগুলি হঠাৎ দেখা দেয় যা ধীরে ধীরে এবং দীর্ঘস্থায়ী অগ্রগতি হয়। শিশুদের মধ্যে ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ ধরণের লিউকেমিয়া দেখা যায়, তবে এটি প্রাপ্তবয়স্কদেরও প্রভাবিত করে। এটি মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, এবং এটি বিভিন্ন ঝুঁকির সাথে বিশ্বব্যাপী বিচরণ করে যার মধ্যে রয়েছে তামাক, বিকিরণের এক্সপোজার এবং কিছু ধরনের কেমোথেরাপি যা ক্যান্সারের অন্যান্য রূপগুলির চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়। লিউকেমিয়ায় একটি জিনগত প্রবণতা রয়েছে এবং যদি কোনও অভিন্ন যুগল লিউকেমিয়া হয় তবে তার ভাই বা বোন একই রোগে ভোগার 20% সম্ভাবনা থাকতে পারে।
আজকে এ পর্যন্ত শেষ। আগামী পর্ব আসছে ব্লাড ক্যান্সারের আরো বিস্তারিত আলোচনা। ততক্ষণ আজকের বিষয়টি পড়ুন। অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন। নিজে সতর্ক থাকুন, অন্যকেও থাকতে বলুন, সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন।
রওশন চৌধুরী – সহ সম্পাদিকা চেতনা বিডি ডটকম।