গত পর্ব শেষ করেছিলাম ব্লাড ক্যান্সার/ লিউকেমিয়া একটি জিনগত প্রবণতা রয়েছে বলে। আজ ব্লাড ক্যান্সারের বাকি অংশ নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করবো।
লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত অস্বাভাবিক রক্তকণিকা সংবহনতন্ত্র ব্যবহার করে সারা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়াই হলো রক্তকোষের ক্যানসার, বিশেষতঃ শ্বেত রক্তকণিকার ক্যানসার। যদি কোনো কারণে অতিমাত্রায় ও অস্বাভাবিকভাবে এই রক্তকোষ তৈরি হয়, তাহলে সেগুলো পরিপক্ব হতে পারে না। এতে প্রচুর অপরিপক্ব ও অস্বাভাবিক রক্তকোষ রক্তপ্রবাহে চলে আসে।এতে মূলতঃ শ্বেত রক্তকণিকাই বেশি আক্রান্ত হয়। কিন্তু ক্রমে অস্থিমজ্জা পুরোপুরি আক্রান্ত হওয়ার কারণে রক্তের অন্যান্য কোষের অভাবও দেখা দেয়। ব্লাড ক্যান্সারের অন্য নাম হেমাটোলজিক ক্যান্সার। এটি বোনম্যারো হতে শুরু হয়। বোনম্যারো হচ্ছে শরীরের জন্যে রক্ত তৈরির কারখানা। অস্বাভাবিক রক্তের কোষ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে বাড়তে থাকে তখন রক্তের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্নতা ঘটায় বলেই ব্লাড ক্যান্সার হয়।
কত ধরণের ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে? চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনুসন্ধানে জানা হয়েছে মোটামুটি তিন ধরণের ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে। সেগুলো হলোঃ
১। লিউকেমিয়া, (২) লিম্ফোসা এবং ৩। মায়েলোমা।
১। লিউকেমিয়াঃ এই ব্যাধির উতপত্তি হয় বোন ম্যারো থেকে। যখন শরীরে প্রচুর পরিমানে অস্বাভাবিক শ্বেত রক্ত কণিকা তৈরি হয় এবং বোন ম্যারোর লাল রঙের রক্ত কণিকা ও প্লেটলেট তৈরির ক্ষমতার উপর হস্তক্ষেপ করে তখনই এমন কঠোর রোগটির সৃষ্টি হয়।
(২) লিম্ফোমাঃ আমাদের শরীর জুড়ে লিম্ফ নোড lymph Node (লসিকাগ্রন্থি) বা lymph gland ছড়ানো রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এই লিম্ফ নোডের সাথে জড়িত। লিম্ফ নোডের ক্যান্সারকেই লিম্ফোমা বলে।
৩। মায়েলোমাঃ এই ক্যান্সার রক্তের প্লাজোমা কোষে শুরু হয়। প্লাজোমা কোষ মূলত: বোন ম্যারোতে তৈরি হওয়া একধরনের শ্বেত কণিকা। মেলোমা কোষগুলি অস্থি মজ্জার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলি হাড়গুলির ক্ষতি করতে পারে এবং স্বাস্থ্যকর রক্তকণিকার ভিড় জমায়। এই কোষগুলি অ্যান্টিবডিও তৈরি করে যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না।
এই ক্যান্সারটিকে প্রায়শই একাধিক মেলোমা বলা হয় কারণ এটি আপনার অস্থি মজ্জার অনেক অংশে পাওয়া যায়। 50 বছরের বেশি বয়সের পুরুষদের এই রোগটিতে ভোগার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি এবং অন্যান্য লোকদের তুলনায় আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে এর বেশি বৈষম্য রয়েছে।
আজ এ পর্যন্ত শেষ করবো। আগামী পর্ব আসছে এই রোগের উপসর্গসমূহ (symptoms) নিয়ে আলোচনা। ততক্ষণ পর্যন্ত এই পর্বে বর্ণীত বিষয়গুলি পড়ুন, অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন। সচেতন থাকুন, অন্যকেও সচেতন থাকতে পরামর্শ দিন। মহান আল্লাহকে স্মরণ করুন।
রওশন চৌধুরী- সহ সম্পাদিকা চেতনা বিডি ডটকম।