পৃথিবীর যে ইতিহাস প্রতিনিয়ত আমাদের জীবন দর্শন শেখায়,
সেই ইতিহাসের জন্ম যেমন মানুষ দিয়েছিল;
ঠিক তেমনি দিয়েছিল প্রকৃতিও।
আমরা প্রকৃতির ইতিহাস উপেক্ষা করে,
মানব ইতিহাসকে কখনও কখনও মানুষের পায়ে লুটাতে বাধ্য করি।
আর এভাবেই ভয়ানক সব সত্য,
অবলিলায় নির্মাণ করি আমরা মানুষ জাতি।
মশা মারতে কামান দাগানোর মতো,
চুলের সামান্য উঁকুন মারতে মানুষেরই হাড়ে তৈরি করা হয় চিরুনি।
কী নিদারুণ নির্মমতা সহজাত অভ্যাসে পরিণত করে,
আমরা এভাবেই সভ্যতা সাজাই।
পৃথিবীর এক প্রান্তে,
ফিলিস্তিন কিংবা সিরিয়ার বাতাস যখন;
বারুদের গন্ধ গায়ে মেখে মানুষের ফুসফুসে অক্সিজেনের সাথে সহাবস্থান করে।
আমরা তখন আমাদের তৈরি মারণাস্ত্রেই মানুষ জীবন ধ্বংস করে,
নির্মাণ করি বীভৎস সব ইতিহাস।
আর এ সকল সভ্যতার নগ্ন ইতিহাস,
নিরাপত্তা পরিষদের ঝকঝকে ফাইলে জমা রেখে; আমরা প্রত্যহ ঘুমিয়ে পড়ি।
আসলে বালি যতই চকচক করুক না কেন!
সে বড়োজোর রক্ত ঢেকে রাখতে পারে,
ধুয়েমুছে দিতে পারে না।
পৃথিবীর ঝলমলে সব মানবতার পোশাক পরে,
যখন উন্নত সভ্যতার চালক গোষ্ঠী,
ঈশ্বরের নামগুলো শিশুর খামখেয়ালি বর্বরতায়;
লিখে দেয় যত্র তত্র।
ধর্ম তখন পূঁজি বাজারের মূলধনের সাথে মিলিমিশে একাকার!
এভাবেই আমাদের নিদারুণ দুঃখ দিনের
অধ্যায়গুলো,
কোন কালেই শেষ হয় না।
শেষ হয় না অভুক্ত শিশুর পাকস্থলীর নিভৃত ক্রন্দন।
বর্বরতার শিকার হয়ে,
এ সকল শিশু নিয়মিত জন্মায় আর মরে যায়।
আর বেঁচে থাকে কিছু উদ্বাস্তু ভবিতব্য।
হিংসা পৃথিবীর একটা স্পৃহাকেও,
অবশিষ্ট রাখে না।
হত্যার পরেও যেমন বেদুঈনের ভারি পোশাকে,
রক্ত প্রবেশ করে না।
ঠিক তেমনি পৃথিবীর নির্যাতিত মানবতার,
নিদারুণ চিৎকার পৌঁছায় না মানবতাবাদের কর্ণকুহরে।
আর তখনই নতুন ইতিহাস লিখতে,
প্রকৃতি হাতে তুলে নেয় মহামারির মারণাস্ত্র।
ক্ষুদ্র এক অণুজীব তখন ঢেকে দেয়,
পৃথিবীর সকল বসন্ত উৎসব।
মানুষ নতজানু থেকে নতজানু হয়,
প্রকৃতি সৃষ্ট সেই নতুন ইতিহাসের বেদীমূলে ।
নাজনীন নাহার – কবি ও সাহিত্যিক।