Take a fresh look at your lifestyle.

আজ রাতেই দেখা হবে

590

 

প্রত্যেক মানুষেরই আশীর্বাদ করবার একজন লোক থাকা চাই,
সেইদিক থেকে তুমি ভাগ্যবতী,
আমার আশীর্বাদ তোমায় আলোক লতার মতো জড়িয়ে থাকবে সব সময়,
আর ভাগ্যবান আমিও-
এই যে আমার ফাঁসি কার্যকরের দিন ঘনিয়ে এলো
এ নিশ্চয়ই স্বর্গে বসে তোমার তাসবীহ পাঠের ফলাফল,
আমার সেলের প্রহরী এখন অতিরিক্ত খাতির আত্তির করে
খাবারের মান আগের থেকে অনেক ভালো-
কয়েকদিন আগে আমার ওজন মেপে নিয়ে গেছে,
সেই আগের মতোই- সাড়ে ঊনসত্তর কিলোগ্রাম,
হার্টবিট যথাযথ,
রক্তচাপে কোনো বাড়াবাড়ি নেই-
সাড়ে ঊনসত্তর কেজি ওজনের বালির বস্তা দিয়ে
জল্লাদকে কয়েকদিন ফাঁসির রিহার্সেল করতে হবে,
ওটা সম্পন্ন হলেই কারা মসজিদের ইমাম আসবে আমাকে তওবা পড়াতে
সাথে থাকবেন গুরুগম্ভীর জেল সুপার মহোদয়।

গেলো বছর এক বর্ষণমুখর সকালে স্বামীর চিন্তায় তুমি স্ট্রোক করলে,
তোমার আর আমার মৃত্যুর এক বিরাট পার্থক্য হলো এই-
তোমার ক্ষেত্রে আজরাইলকে হঠাৎ ডিসিশন নিতে হয়েছিলো,
একেবারে ‘ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে’-এই টাইপের
আর আমার ক্ষেত্রে আজরাইল বেকার বসে থাকবেন
এখানে সিদ্ধান্তের মালিক সরকার,
ঘোষণা আসে মোসাহেব বিচারকের মুখ থেকে,
আর তা কার্যকর করে জল্লাদ;
এতে জল্লাদের দু’মাসের সাজা মওকুফ হয়ে যাবে
আসল সুবিধাভোগী হবে সরকার,
এই উন্মাদ সরকার জানেও না,
আমি ফাঁসিতে ঝুলে পড়ার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই তোমার সাক্ষাৎ পাবো,
তাহলে কার লাভ বেশি?

গতকাল শেষরাতে একটি স্বপ দেখে জেগে উঠেছিলাম
চোখ মেলে তাকাতেই দেখি প্রহরীর সতর্ক চাহনি,
হাসি দিয়ে বললে, ফজরের আজান হয়নি- আরেকটু ঘুমিয়ে নিন,
তাকে বললাম, আমি মাখন আর শবরি কলার ঘ্রাণ পাচ্ছি-
এগুলো কি দড়িতে মাখিয়ে পিচ্ছিল করা হয়?
সে চমকে উঠে সামলে নিলো নিজেকে
তারপর বললে, আমি যেনো অজু করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ি-
কুরআন তেলাওয়াত ও তাসবীহ তাহলিল করি।
তোমাকে একটি কথা বলি প্রেয়সী,
আমি আমার মাথায় কালো কুচকুচে জমটুপি দেখলাম
মসজিদের ইমামের সাথে জেল সুপারকে দেখলাম
তার হাতে নতুন একখান রুমাল দেখলাম,
যমদূতের মূর্তি নিয়ে জল্লাদকে দেখলাম
ফাঁসির মঞ্চ দেখলাম-
পিচ্ছিল দড়িটাতে মাখন ও শবরি কলার গন্ধ পেলাম
স্টেথিস্কোপ গলায় ঝুলিয়ে এপরোন পরা ডাক্তার দেখলাম,
পুরাতন ট্রেতে নোংরা চাকু ও বস্তা সেলাইয়ের সুঁই সুতা নিয়ে মদের বোতল হাতে ডোমকে দেখলাম।

প্রজাপতিটার ঘুম নেই
কোন্ খেয়ালে সেলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে,
আজই প্রথম ওর ভাষা বুঝতে পারি-
তোমার আমার জন্যে আর কোনো ফুল না কি ফুটবে না কখনো,
কাশবন হাতছানি দিয়ে ডাকবে না গড়াইয়ের মোহনায়
আর কোনো দোয়েল বাজাবে না শিশ,
আমার মনে হয়, আজ রাতেই তোমার সাথে আমার
সাক্ষাৎ হতে চলেছে-
ওপারের ইমিগ্রেশনগুলো জানা নেই,
তোমার তো এক বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা
কোথাও ঝামেলা থাকলে ছাড়িয়ে নিও-
সাড়ে তিন বছর জেল খাটার পর ফাঁসি,
এরপর অনন্ত কাল বন্দি থাকতে চাই কেবলই তোমার বুকের খাঁচায়।

 

 

.রফিকুল্লাহ কালবী – কবি ও সাহিত্যিক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.