আমি জেলে যাবার জন্যে প্রস্তুত।
দুইখান লুঙ্গি
একটি গামছা
দুটি টি-শার্ট
একটি টুথব্রাশ
শিমুল তুলার বালিশ
একটি পুরোনো কাঁথা
একজোড়া চপ্পল
পাতলা কম্বল ও
একটি চাদর-
আরেকটি ছেঁড়া চাদরে পুটলি বাঁধা আছে।
বাজারের ব্যাগে আছে-
একটি জায়নামাজ
ভাসানির তালের টুপি
তসবির দানা
কবিতা লেখার নোট
কয়েকটি বলপেন
নাজিম হেকমতের বই
মেশকাত শরীফ ও
সাইয়েদ কুতুবের ফি জিলালিল কুরআন
ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার হতে আমি প্রস্তুত-
মধ্যরাতে দরজায় পুলিশের বুটের শব্দ
একটুও কাঁপে না শরীর,
কারণ, ওটা দ্বিতীয় বাড়ি আমার।
রাজপথে মিছিলে টিয়ার সেল
গুণ্ডা পুলিসের লাঠিচার্জ
রফিক বরকতের মতো হজম করি আমি,
হাঁটুতে রাইফেল ঠেকিয়ে গুলি
তলপেটে বুটের আঘাত
শফিক সালামের মতো সয়ে যাই,
শরীরের শিরায় শিরায় আসাদের রক্ত
ভাতের মাড়ের মতো টগবগ করে ওঠে-
নূর হোসেনের উদোম দেহে
জিরো পয়েন্টে বিপ্লব ছড়াই,
পাঁজরের হাড্ডি খুলে আঘাত করি গণ ভবনের দেয়ালে,
‘গণ’ শব্দটিকে জাতীয় পতকায় লিখবো বলে
রংমহলের পশুদের গায়ে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পেশাব করি,
মানচিত্রের ‘মান’ বাঁচাতে
বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখি ফালানির কষ্ট-
ব্যালট বাক্সের কান্না-
পিলখানার সিঙ্গেল লাইন
শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠা লাশের মিছিল
দেয়ালে দেয়ালে খোদাই হাহাকারের আওয়াজ
মনের আরশিতে বেদনার নীলাকাশ
হায়েনার ছায়া ফেলে বারমুদা ট্রায়াঙ্গলের মতো।
পুলিশের কাস্টডিতে রিমান্ডের হিসাবনিকাশ-
আমি ভয় পাই না,
দুহাত পেছনে মুড়িয়ে হ্যান্ডকাফ-
পায়ে কোমরে ডাণ্ডাবেড়ি
আমি ভয় পাই না,
নখের ভিতরে সুঁচ ঢুকানোর বেদনা
দাঁতে দাঁত চেপে লুকিয়ে রাখি প্রতিটি কোষের মধ্যে,
পায়ুপথে গরম ডিমের অনুপ্রবেশকে
মায়ের প্রসব বেদনার সাথে মেলাই,
দফায় দফায় ইলেকট্রিক শক
চোখ বুঁজে দমটাকে আটকে রাখি কণ্ঠনালীতে,
তবু একফোঁটা অশ্রু দেখাবো না তোমাকে-
ওটা স্রষ্টার জন্যে রেখে দিই জায়নামাজে ফেলবো বলে,
ফাঁসির মঞ্চে জল্লাদের ভয়ঙ্কর চোখ
জমটুপি ভেদ করে নাকে আসে শবরি কলা ও মাখনের গন্ধ
পিচ্ছিল ম্যানিলা রোপ,
মৃদু বাতাসে ওড়ে জেল সুপারের ফেলে দেয়া রুমাল
আমি ভয় পাই না।
গুম হবার জন্যেও প্রস্তুত আছি আমি,
প্রস্তুত আছি ক্রসফায়ারে খুন হবার জন্যে-
ইটের ভাটার লেলিহান আগুনে নিক্ষেপ হবার সময়
ডিবি পুলিশের চোখে চোখ রেখে বলবো-
এই দেশকে ভালোবাসি আমি
আমি তোমার মতো কাপুরুষ খুনি নই,
গলায় বালুর বস্তা বেঁধে তুরাগের পঁচা পানিতে ডুবিয়ে দেবার সময় বলবো-
আমি ভয় পাই না,
দুদিন পর আমি ঠিকই ভেসে উঠবো
পঁচে গলে ফুলে উঠবে আমার লাশ-
নদীর দুকূলে সারি সারি গণমানুষের চোখ
তারা দেখবে- ভেসে যাওয়া দেশপ্রেমিকের লাশ,
আতর লোবান পায়নি বলে যে মানুষটার কোনো আফসোস নেই-
কাফন ও কবর জোটে নাই বলে- নাই কোনো কষ্ট,
জানাজার নামাজের কোনো দুঃখও নেই মনে।
রফিকুল্লাহ্ কালবী-কবি সাহিত্যিক লেখক