জেগো ওঠো কবি!
বসন্তের এই ফিনিক ফোঁটা জোছনায়
শুধুই কী তুমি আকন্ঠ পান করছো চাঁদের আলো!
বুদ হয়ে আছো নেশায়, রূপালি এই রাতে!
কখনো ডুবে থাকো কার্তিকের সবুজ ধানের শীষে,
কখনো তার মুগ্ধ হিল্লোলে—–
উড়ে যাওয়া ধান শালিকের ডানায় খুঁজে নাও
রোদেলা স্বপ্নের আলোছায়া!
কবি জেগে ওঠো! স্বপ্নের মগ্নতা ছেড়ে—–
মনটা তো সেই কবেই রেখে এসেছো,
নীল সাগরের বালুকাবেলায়!
সৈকতে বালিয়াড়ির ভাজে ভাজে ঝিনুকে লুকানো
তোমার ভালোবাসার মায়া!
এবার ছড়িয়ে দাও পথেঘাটে শুয়ে থাকা পথকলিদের মাঝে।
গাঙচিল আর ইকারুসের ডানায় নাই বা ছোঁয়ালে তোমার স্বপ্নের ছায়া!
কিংবা ঝুম বরিষনে স্বপ্ন দেখে মন
মেঘবালিকার মতো চাও বানাতে মেঘের রাজ্যে
বুনোলতায় ঘেরা সুরম্য প্রাসাদ!
তোমার ভালোবাসার মেঘদেবতার জন্য!
বরং ভাবো একটা জীর্ন কুটিরে একমুঠো আলোয় ভরিয়ে দিতে হবে—-
তোমার স্বপ্নের প্রাসাদের বাইরের শতছিন্ন মলিন বসতিটিকে!
এটাকে কি বেঁচে থাকার আচ্ছাদন বলে!
আষাঢ় এলেই একপশলা হাহাকার বৃষ্টি হয়ে ঝরে টিনের চালে!
এবার কি জেগে ওঠবে কবি ?
নাকি ঘন ঘোর বর্ষা এলে,আজও তুমি
দখিনের খোলা বারান্দায়,আধো ভিজে লিখবে
তোমার বর্ষামঙ্গল কাব্যখানি!
ভেজা বেলী আর মাধবীলতার সুবাস নিয়ে
রাখবে একআঁজলা বৃষ্টিজল তোমার বুকের মাঝে!
কবি! তুমি কি চোখ মেলে দেখবে না কখনও!
একহাটু জলে ডুবে, মা তার শিশুটিকে বুকের ওমে
কতোকাল আর বাঁচাবে বলো!
না হোক লেখা কোনো কবিতা কিংবা সুললিত কাব্যগ্রন্থ!
তবু তুমি জেগে ওঠো,
একরাশ অভিমানের মেঘ জড়ায়ে চোখে,
কি লিখবে তুমি আবেগের সূরা পানে!
মহাপ্রলয়ের মতো একটা ঝাঁকুনি দিয়ে
চাই কবি তোমাকে জাগাতে ।
একদিন তোমার ঘুম ভাঙ্গবে
চোখের তারায় জমানো সুন্দরের নেশার রেশ মুছে যাবে,
জানি লিখে যাবে তখন মানবতার কথা,
পথশিশুদের কথা,ধর্ষিতা নারীদের কথা!
আটপৌরে জীবনের যন্ত্রনার কথা,স্বপ্নভঙ্গের কথা!
কোজাগরী চাঁদ আর পরিযায়ী পাখীদের গল্প
আজ জমাট বাঁধুক,
একখন্ড বেদনার বরফে,
কোনোদিন কারো ভালোবাসার উষ্ণতার ছোঁয়ায়
হয়তো নদী হয়ে যাবে সে সফেদ কঠিন জল!
তারপর একটা বরফ গলা নদী হয়ে যে বইবে চিরকাল!
জেগে ওঠো কবি!
হাছিনা মমতাজ ডলি- কবি ও সাহিত্য গবেষক।