১. সুন্দরীর আশা
কথায় কতটা আছে গুরুত্ব,
তরুণীর সনে আছে দূরত্ব।
সেই জানা কদাচ কথারা,
যদিও সব আজ বাধনহারা।
তার সেই জীবনের কথা,
আছে শুধু কতো স্মৃতির ব্যথা ।
তবুও মনে স্বপ্ন আর কল্পনা ,
কিছু বাস্তব চিত্রের জল্পনা ।
তখনো তুমি ছিলে মনের গভীরে ,
অন্তহীন নীরবতার আস্বাদের তরে।
তখনো আঁধার সরিয়ে জগতের,
আলোর পথে নিশান হয়েও পথের।
শান্তির আগমনী গান গাওয়া,
আকাশের মিষ্টি স্পর্শের হারিয়ে যাওয়া।
তখনো তুমি ছিলে ঐ নীল আকাশের,
শঙ্খচিলের উড়ানের সার্থকতা সত্যের ।
আছে শুধু সুখ অবিরাম ভালোবাসা,
সেই সুন্দরী তরুণীর কতো আশা।
সব আজ ভেসে যায় একটু বাতাসে ,
যদি কোন দিন ও কোন আশা আভাসে।
আসে শুধু স্বপনের ভালোবাসার মূর্ছনা,
কত সুন্দর একটা পুষ্পের মধুর ব্যঞ্জনা ।
__কৃষ্ণ গোপাল ঘোষ
২. শিয়াল ও ছাগলের গল্প
কাঠফাটা রোদ জৈষ্ঠ্যমাসে
লাগছে ভিষন গরম,
বিষিয়ে উঠে জীবের জীবন
জল পিপাসা চরম।
বনের ধারে শিয়াল মামার
রাত বিরাতে গান,
কাতর এখন জলের তরে
যায় বেরিয়ে প্রাণ।
শিয়াল যখন খোঁজছে পানি
বনের ধারে ধারে,
একটি কূয়া দুরের গাঁয়ে
দেখছে বারে বারে।
কূয়ার পাড়ে এসে যখন
দেখলো সথায় পানি,
আগুপিছু ভাবলো না সে
দিতে লম্ফ খানি।
গভীর কূপে শিয়াল যখন
খাচ্ছে হাবুডুবু,
বাঁচার আশা হচ্ছে ক্ষীণ
জলেই চুবুচুবু।
কূয়ার ধারে দেখলো তখন
একটি ছাগল খাড়া,
কাতর স্বরে শুধায় তারে
আছে কি তার তাড়া?
চতুর শিয়াল ভাবছে মনে
ছাগল বোকা জানি,
বাঁচতে পারি ছাগল দিয়ে
কূয়ায় এনে টানি!
লোভ দেখালো ছাগলটারে
ভিষন মিঠা পানি,
এমন পানি খাসনি কভু
জানি তাহা জানি!
তাহার কথায় আস্তা রেখে
ছাগল দিলো ঝাপ,
কপট হেসে শিয়াল শুধায়”
উপকারটি করলি বটে বাপ!
ছাগল যখন যাচ্ছে ডুবে
মৃত্যুতে চোখ রাঙায়,
শিয়াল চড়ে বসলো পিঠে
উঠলো শেষে ডাঙ্গায়।
কাতর স্বরে ছাগল শুধায়
যাসনে ফেলে, একটুখানি দাড়া,
পায়ে পরি, বাঁচা আমায়
শিয়াল বলে ” আছে আমার তাড়া।
শিয়াল রাখে বুদ্ধি বগল তলে,
হার মানাবে তারে কলে কলে,
ছাগল সদাই বোকা-ই সেজে রয়,
সব হারিয়ে ভাসবে চোখের জলে!
—গোলাম ফারুক
৩. ভাঙ্গা ঘরের চাঁদের আলোক
আমার এই ভাঙ্গা ঘরে
চাঁদের আলোক আছে চিরন্তন
দুঃখ জ্বালা আমার সবই হারায়
মাগো তোমায় দেখি যখন।
মাগো তোমার চেয়ে দামী কিছুর
আজ আর নেই যে প্রয়োজন
স্বর্গের সুখ এই যে আমার
যখন আলিঙ্গনে রাখি দু’ চরণ।
এমনি থাক যেমন আছো মাগো
দিয়ে বটবৃক্ষের ছায়ার মত
পাইনা খুঁজে মাগো তোমার মত
এ যে আজও লাগে পিপাসার মত
মাগো যত দেখি তবু ভরে না মন
তুমি যে আমর সবচেয়ে আপন
আমার এই ভাঙ্গা ঘরে
চাঁদের আলোক আছে চিরন্তন
দুঃখ জ্বালা আমার সবই হারায়
মাগো তোমায় দেখি যখন।।
কত স্নেহ আর সোহাগ করে
তুমি আমায়
মাগো করেছো যে বড়
আমার সুখের জন্যে সব করেছো
একটু ব্যথার আবেশ পেলেই
উদ্বেল চিত্তে
ঝাপটা দিয়ে আমায়
বুকে জড়িয়ে নিয়েছো।
মা ছাড়া যে কে করে আর
এই পৃথিবীতে এমন
বোঝেনা যে আর কেউ বোঝেনা
এতটুকু এক অবুঝ শিশুর মন
মাগো যখন তুমি ঘুমিয়ে থাকো
আজও ঘেঁষে বিছানার কোণ
বসেনা মন কোন কিছুতে আর
বারবার কাছেতে ছুটে যায় মন
তিলতিল করে বিলিয়ে যে সব
পূর্ণ করেছ এ জীবন
কতটুকু সুখ আর পেরেছি দিতে
মাগো তোমায় এ জীবমে তেমন।
গর্ভগৃহ থেকে প্রতি ক্ষণে মুহূর্তেও
তোমায় ছাড়া আমার কাটেনিযে
রক্ত মাংস নিংড়ে করেছ লালন
আমায় মাগো আপন গর্ভাগারে
নিদারুণ সেই প্রসব বেদনা সহেছ
দশ মাস দশ দিন নিজে
দিয়েছ জনম তোমার গর্ভ চিঁড়ে
আপন নাড়ি ছিড়ে
এই ভেবে কাঁদে মনপ্রাণ
অনস্বীকার্য মাগো তোমার অবদান
অশ্রুতে ভাসে দুই নয়ন
চাইনা ছাড়তে কভু তোমার দু’চরণ
মাগো তোমার চেয়ে দামী কিছুর
আজ আর নেই যে প্রয়োজন
স্বর্গের সুখ এই যে আমার
যখন আলিঙ্গনে রাখি দু’ চরণ
আমার এই ভাঙ্গা ঘরে
চাঁদের আলোক আছে চিরন্তন
দুঃখ জ্বালা আমার সবই হারায়
মাগো তোমায় দেখি যখন।।
— সুমন জামান
৪. ভুল নামকরণ
তোমাকে বলা হয় না বলেই যে,
তোমাকে আজ-কাল আর ভালোবাসি না;
এটা ভুল।
একটা ভুল আমাদের বিশ্বাসের নকশা বদলে দিলো বলে,
আমার ভালোবাসার জিওমেট্রিক বদলে যাবে;
এটাও ভুল।
যদিও তোমার ভুল সিদ্ধান্তে নির্মিত হয়েছে,
আমাদের বর্তমান সম্পর্কের ভুল চলচ্চিত্র।
তাই বলে আমার অনুভূতির স্বর ও ব্যঞ্জনবর্ণ ,
নিজের খেয়াল বদলে ফেলে;
ভালো না বাসার ভুল রঙে কোন ছবি আঁকবে।
এটাও ভুল।
তোমার জানা থাক বা না থাক,
আমার প্রতিটি পবিত্র প্রার্থনায়;
তোমার জন্য আশীর্বাদের খুশবু উড়ে।
তোমার জন্য এখনও নিয়মিত মুখস্থ করি,
বিশুদ্ধ ভালোবাসার দশঘর নামতা।
আজ-কাল আমার ত্রিসীমানার কোথাও,
তোমার অনুরাগের ছায়া স্পর্শ না করার পরে-ও।
আমি যে প্রত্যহ আমার চৈতন্য চেতনে তোমায় স্পর্শ করি না,
এটাও ভুল।
তোমার ভুল বানানে লেখা কবিতার শরীরে,
যদিও এখন আর সঞ্চারিত হয় না আমার স্পন্দন।
তোমার হৃদপিণ্ডের ললাটে,
গোলাপি আভার আঁচড় কাটে না আর আমার আদর সুখ।
তাই বলে যে,
তোমার জন্য আমার প্রণয় আরতি রোজ সাজে না।
এটাও ভুল।
তোমার সকল ভুল,
আমি আমার একমাত্র ভালোবাসার শুদ্ধতায়;
এখনও ভালোবাসি নামেই সমর্পিত রেখেছি।
সমর্পিত রেখেছি আমার একমাত্র মোহন প্রেমে,
ভুল করে যার ডাক নাম এখনও তুমি।
— নাজনীন নাহার
৫. ফুরানো দিন
ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিলাম একা
অসংসারী বাউলের দল হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল
অদৃশ্য দোতারা।
তোমার কাছাকাছি এসে বুঝতে পারি
মৌন ঋষির ধ্যান মিশেছে বাতাসে ;
আঘাত ছুঁয়েছে দেহ
কলঙ্ক ঢেকেছি কদমপাতায়।
হেমন্তের মাঠ, ভোরের কুয়াশা আর
রাত্রির আকাশ পেরিয়ে ছুটে আসি
অলৌকিক তোমার পাড়ায় —
মাতালের মতো জয়ধ্বনি তুলে
অধরা তোমার কাছে আসতে আসতে
মাঝপথে ফুরিয়ে যায় দিন।
— হাসান ওয়াহিদ