১. ঈদের সেমাই
—বিষ্ণুপদ বিশ্বাস
হান্নানের দাদিমার আছে দেশি গাই,
খাঁটি দুধ পাবো বলে আমি ছুটে যাই।
মেয়েটার জন্যে রোজ ভুলে ভয় ডর,
রোদেজলে যেতে হয় হেসে সাল ভর।
ছাত্র হান্নান আমারে দিয়েছিলো খোঁজ,
ক’বছর হয়ে গেলো যাচ্ছি সেথা রোজ।
তাঁকে দেখে মনে পড়ে কথা মোর মা’র,
কাছের মানুষ হয়ে গেছি আমি তার।
ভালোবেসে দাদি তার বেটা মোরে কয়,
ভালো মন্দ সুখ দুঃখ ভাগাভাগি হয়।
দুধেভাতে রেখেছেন মেয়েটাকে মোর,
কি করে যে করব আমি ঋণ শোধ ওঁর!
শোধ কভু হয় নাকি মায়েদের ঋণ ?
শাড়ি নিয়ে যাই টানে এ ঈদের দিন।
বললেন সাবান জলে হাত করে সাফ,
এক বাটি সেমাই দি লাতনি খাবে বাপ?
নিষেধ করবো তাঁকে ? সে ক্ষমতা নাই,
ঘরে ফিরে আসি নিয়ে ঈদের সেমাই।
জাত ধর্ম দিয়ে সব মন থেকে বাদ,
সবে মিলে চাখি সেই সেমাইয়ের স্বাদ।
২. ঈদের প্রার্থনা
-নিরঞ্জন কুমার রায়
ঈদের খুশি ঈদের হাসি,
ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বব্যাপী।
হৃদয় আনন্দে উঠুক ভরে,
খুশির বন্যা বয়ে যাক ঘরে ঘরে।
প্রভুর বন্দনা করুক সবে মন-প্রাণ ভরে,
তাঁর করুনায় সকল বিপদ যাবে সরে।
ধর্ম-বর্ণ,ধনী-গরিব,উঁচু-নিচু সকল বিভেদ ভুলে,
ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে প্রাণে প্রাণে যাক সবে মিলে।
দেশের তরে এক হয়ে করি কাজ,
হারি-জিতি নাহি লাজ।
সকল হিংসা-দ্বেষ হানাহানি ভুলি,
এই পৃথিবীটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলি।
মহান জগৎপিতার কাছে সবে করি প্রার্থনা,
বিশ্ব থেকে দূর হোক সকল রোগ-ব্যাধি যন্ত্রণা।
দূর হোক ঐ নাগিনী মহামারী ব্যাধি করোনা,
এ বিশ্বে আবার বয়ে যাক শান্তি-সুখের বন্যা।
৩. টোকানো জীবন
__নীল
আমি নীল !!
নীল টোকাই !!
টোকানো জীবন আমার !!
কমলাপুর রেলস্টেশনে আমার বসবাস !!
কখনও স্টেশনের বেঞ্চ, কখনও স্টেশনের মোটা পিলারের খুপরি বা খালি মালবাহী বগির আবর্জনার মাঝে ই শুয়ে বসে বা হেলান দিয়েই আমার ক্লান্ত শরীরের ক্লান্তি দূর হয় প্রতিনিয়ত !!
অতিবাহিত হয় প্রকৃতির খড়া, ঝড় বৃষ্টির দিবারাত্রি !!
স্টেশনের বড়বাবু কর্তৃক ধর্ষিতা পাগলী মায়ের গর্ভে আমার জন্ম !!
এক অমাবস্যার রাতে স্টেশনের আস্তাকুঁড়ে নীল বর্ণ নিয়ে জন্ম হওয়ায় স্টেশনের ই বড়বাবু আমার নাম রেখেছিলো নীল !!
আর নীল থেকে ই আমি আজ নীল টোকাই !!
কাল ঈদ !! ঈদ মোবারক !!
অনেকেই জানতে চেয়েছে__
ঈদে কি কিনলে নীল ?
খাবার মেনু কি করলে ?
কোথায় ঘুরতে যাবে ?
এমন হাজারো প্রশ্ন !!
প্রতিনিয়ত বাঁচার তরে যাদের জীবন যুদ্ধ তাদের আবার ঈদ ও ঈদের পোশাক ??
তোমাদের বাড়ী যাওয়ার ব্যস্ততায় স্টেশনের প্লাটফর্মে যে দামী জুতার ধূলোময়লা রেখে গেলে,
ওটাই নীল টোকাই এর ঈদের পোশাক !!
যে পঁচা খাবারগুলো খেতে না পেরে ফেলে দিলে স্টেশনের ডাস্টবিনের আবর্জনার স্তুপে !!
ওগুলোই নীল টোকাই এর ঈদের স্পেশাল খাবার মেনু !!
আর ঘুরতে যাওয়া সে তো কল্পনা মাত্র ।
অনেকেই নীল কবিকে ভালোবেসে ঈদের দাওয়াত দিয়েছে !!
কিনে দিতে চেয়েছো দামী পাঞ্জাবি, গাড়ী, বাড়ী, আরও কতো কি ?
কি যে খুশি লাগছে তোমাদের এ হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার নিমন্ত্রণে !!
এ অনন্য অনুভূতি বলে বোঝাতে পারবো না !!
কিন্তু দুঃখের বিষয় ঠিকানা দাওনি !!
পরে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছো রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে নীল টোকাই কে !!
হয়তো অনেকে আহাঃ, উহুঃ ও করেছো !!
দাওনি এক চিনতে ভালোবেসে হাতের স্পর্শ !!
যদি নীল কবির অন্তরালে নাক শিটকানো
দুর্গন্ধময় পোষাকে নীল টোকাই হাজির হয় তোমাদের বাড়ীর দরজায় !!
এক সেলিব্রিটি ম্যাম তো ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০২ ধারা মোতাবেক বন্ধু বানালেন, দাওয়াত ও দিলেন !!
ঠিকানা দিলেন না !!
হা হা হা !! ঠিকানা বিহীন ঠিকানার দাওয়াত !!
অথচ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০২ ধারা ডাকাতির মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ৪০২ ধারা বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধ !!
আমি ডাকাত নয় !!
অর্ধাহারে, অনাহারে অথবা ঢাকা ওয়াসার ময়লা পানি খেয়ে আমার দিনরাত যাপিত হয় !!
ডাকাতি করিনি !!
ডাকাতি করলে হয়তো ভালোই থাকতে পারতাম !!
কিন্তু করিনি !!
মনে প্রাণে ঘৃণা করি অসৎ জীবন যাপনে !!
কারু বিশ্বাস ভঙ্গ ও করিনি !!
কবিতা আমাকে খুব খুবই ভালোবাসে ।
আমাকে ভালোবেসে তার স্বাচ্ছন্দ সুখী জীবন পদদলিত করে বেছে নিয়েছে টোকাইয়ার জীবন !!
আমিও তাকে অনেক অনেক ভালোবাসি !!
তার বিশ্বাসে বিন্দুমাত্র আঘাত করিনি !!
আসলে তোমাদের ঈদ নিমন্ত্রণ আভিজাত্যের প্রতি হতদরিদ্রের প্রতি নয় ।
তোমাদের মানবতা গল্প, উপন্যাস ও কবিতার অমৃতবাণী তে সীমাবদ্ধ, বাস্তবতায় নয় !!
তোমাদের প্রেম নীল কবির প্রতি,
নীল টোকাই এর প্রতি নয় !!
তোমাদের ভালোবাসা কবিতা ও প্রকৃতির মতো নয় !!
নিয়ম রক্ষা মাত্র !!
অথচ তোমারা ইচ্ছে করলেই নীল টোকাই কে তোমাদের সিঁড়ি ঘরে রেখে, তোমাদের ফেলে দেওয়া পুরোনো ছেঁড়া জামা ও জুতো আর প্রতিদিনের বাসি পঁচা ঝুটা খাবার দিয়েই, দিতে পারতে অমৃতের স্বাদ ও এক পরিপূর্ণ সুখি জীবন !!
তা করোনি ঘুনাক্ষরেও !!
সে সৌভাগ্য বেওয়ারিশ, পিতৃমাতৃহীন নীল টোকাই এর হয়নি !!
নীল টোকাই কে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছে যে কবিতা৷?
আমি তার কবি !!
কবিতা টোকাইয়াদের ভালোবেসে আমি আমার খাবার, কবিতা টোকাইয়াদের মুখে ই তুলে দিতে চাই !!
প্রকৃতির মতো উদার ভালোবেসে,
কবিতা টোকাইয়াদের বিলানো আমিই__
কবিতাদের নীল কবি,
কবিতাদের নীল টোকাই কবি !!
৪. চলে যেতে হয়
—মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ।
চলছে মৃত্যুর মিছিল
প্রতিনিয়ত চলে যাচ্ছে
আপন জন কিম্বা পড়শী কেউ,
কত ক্ষনস্থায়ী এ জীবনকাল!
মৃত্যু শেষ করে দেয় সব অর্জন,
ডিগ্রি পজিশন প্রতিপত্তি
সম্পদ স্ত্রী সন্তান সন্ততি
ভাবেনা কোনো কিছুর কথা,
পরোয়া করে না কোনো বাধা,
ফেরেস্তা এসে শুধু বলে –
তোমার রিজিক
পান করার পানি
তোমার অক্সিজেন
তোমার জন্য বরাদ্দকৃত সব কিছুই
একে একে ফুরিয়েছে হিসাব মত,
এখন তোমার প্রভুর কাছে যেতে হবে-
বান্দার তখন বলার কিছুই থাকেনা,
এভাবেই বিনা বাক্যে আত্মসমর্পণ করে
চলে যেতে হয় শেষ যাত্রায়-
অনন্ত কালের ঠিকানায়।
৫. ঈদ
শাওন
স্বপ্ন দেখি
স্বপ্ন বুনি।
ইদ কবে
দিন গুনি।
সালাম দিই
পয়সা নিই।
সুখ খুঁজি
নেই পুঁজি।
তবুও ইদ
দ্বারে এলো।
কম বেশি
সবাই খেল।।