বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া বাউণ্ডুলে ছেলে,
মাথামুণ্ডু ঠিক থাকে না মেয়ে দেখতে পেলে!
তার উপরে সেই মেয়েরা সুন্দরী হয় যদি,
রূপ হেরি তার ভুখা হৃদয় হয় পাহাড়ী নদী!
লুটিয়ে ধন ফূর্তি করে রাজার মতন চলে,
মদন বাণে বিদ্ধ হয়ে যা খুশি তাই বলে।
পুলিশ টুলিশ ডরায় না সে বিধায়ক চাচা,
হিম্মত আছে কারো বুকে খুলে দেবে কাছা ?
আইনকানুন পদতলে কে আর তারে নাশে ?
নরপশু ঘুরে বেড়ায় শিকার করার আশে!
নিত্যদিনের মতন সেদিন ছিল পথের বাঁকে,
একলা পথে যাচ্ছে হেঁটে দেখল মেয়েটাকে।
রূপ হেরি তার হৃদস্পন্দন গেল যেন থেমে,
মনে হলো ধরার বুকে চাঁদ এসেছে নেমে!
কত মেয়েই দেখেছে সে এমন দেখে নাই রে!
মনে মনে বলল পশু ‘একেই আমার চাই রে!’
আগুন লাগল দেহ মনে স্বপ্নে বিভোর হলো,
ভাই এসে তার বাইকে চাপিয়ে নিয়ে গেলো।
ক্ষণেক পরেই দূর হলো তার স্বপন সর্বনেশে,
হাতের মধ্যে এসে শিকার ফস্কে গেল শেষে!
নাওয়া খাওয়া সবই গেল রূপের মোহে পড়ে,
চোখের মাঝে ভাসলো ছবি দিবানিশি ধরে!
মোটরবাইকে সঙ্গী লয়ে মাতাল হয়ে নেশায়,
পথে পথে ঘুরে বেড়ায় সেই রূপসীর আশায়!
বিকেলবেলা পথের বাঁকে সেদিন জুম্মাবারে,
স্বপ্ন হলো সত্যি যেন দেখতে পেলো তারে!
আগের মতন ভুল না করে এবার সরাসরি,
“শাদি করতে চাই তোমারে” বলল বাহু ধরি।
হঠাৎ যেন মেয়ের মাথে আকাশ ভেঙে পড়ে,
পথের মাঝে মত্ত হয়ে পাগলামি সে করে!
“জান নিয়েছ তুমি আমার জীবন হতে দামী,
সোনায় মুড়ে রাখব ঘরে বেগম করে আমি!”
চেষ্টা হলো বৃথা মাঝির লাগল না বাত পালে,
হাত ছাড়িয়ে রণচণ্ডী চড় কষালো গালে!
“মদন মাথায় চড়েছে না, কোমল বাহু ধরে ?
এত বড় সাহস শুয়ার মা বোন নাইরে ঘরে ?”
সহজে ঘী উঠবে না রে হয়ে গেছে দ্যাখা,
বুঝে গেল আঙুল এবার করতেই হবে বাঁকা!
আদিম খিদেয় মত্ত হয়ে বড়োলোকের পো,
বাজপাখির মতন গিয়ে মারলো গায়ে ছোঁ!
ছিঁড়ে খাবার লোভে পশু জাপটে ধরে ধেয়ে,
গোপনাঙ্গে লাথি মেরে বাঁচল প্রাণে মেয়ে!
থানা পুলিশ করল পিতা কাজ হলোনা কিছু,
ক্ষুধার্ত বাঘ হরিণীটার ছাড়লোই না রে পিছু!
রোজ রাতেই মনে হয় তার বিছানাতে শুয়ে,
খিদে বেড়ে গেছে দ্বিগুণ তুলোট শরীর ছুঁয়ে!
অপেক্ষায় সে রইল বসে একলা কখন পাবে,
ছিঁড়ে খেলেই দেহ-মনের আগুন নিভে যাবে!
দুইটি বছর পার হয়ে যায় বসে থেকে থেকে,
মেয়ে ভাবে কী হবে আর অতীত মনে রেখে!
জোরকদমে তাই ত মেয়ের পড়াশোনা চলে,
পশুর মনে তুষের আগুন ধিকিধিকি জ্বলে!
খবর পেল কোন শহরে কোন কলেজে পড়ে,
কবে কখন যায় রূপসী কোন গলিটা ধরে।
পাক্কা খবর কানে কানে চেলা এসে বলে,
দিবানিশি প্রতিহিংসার আগুন দেহে জ্বলে!
সারা নিশি ছক কষে সেই জুম্মাবারের প্রাতে,
পুরো দস্তুর তৈরি হয়ে বেরোয় চেলার সাথে।
গেটের ওপার পথের পাশে ছোট্ট সাদা গাড়ি,
তার ভিতরে দুইটি মানুষ দেখছে নর-নারী।
দামী দামী পোশাক গায়ের রঙটা খুব গোরা,
মানুষরূপী দেখতে হলেও মানুষ নয়রে ওরা!
দুই শিকারীর দৃষ্টি সদা ফাঁতনা গেটের পানে,
মৎস্য তুলে নেবেই তারা কৌশলে এক টানে!
সময় মত কলেজ থেকে যেই বেরলো মেয়ে,
বর্বর উল্লাস শুরু হলো হাতের নাগাল পেয়ে!
ছুটে এসেই হাত ধরে তার করলো টানাটানি,
মুখে মুখেই হয়ে গেলো খবর জানাজানি।
একটু দূরে গেটের কাছে ভীড় বাড়তে থাকে,
দুই রাক্ষসে ছিঁড়ে খেতেই চাইছে মেয়েটাকে!
ধস্তাধস্তি চলছে ওপার পিস্তল আছে হাতে,
দূরে সরেই রইলো সবাই প্রাণের ভয়ে তাতে!
“বাঁচাও!বাঁচাও!” আর্তনাদে গগন গেল টুটি,
চেয়ে চেয়ে দেখল সবাই এলোনা কেউ ছুটি!
“বাঁচতে চাইলে তুমি কিন্তু বেগম হতে পারো,
আমার যদি না হও তবে হবেনা আর কারো!
আমার মতেই চলতে হবে শর্ত এটাই খালি,
হৃদয় কলসি ভরে দেবো প্রেমের সুধা ঢালি!”
বীরাঙ্গনা পাঁচটি আঙুল বসালো ফের গালে,
গুড়ুম গুড়ুম পাঁচটি শব্দ সমান তালে তালে!
যে যার মতন ছুটল ভয়ে রইল না আর কেহ,
পথের উপর ধপাস করেই পড়ল নিথর দেহ!
‘খুনি’ ফেরার হয়ে গেলো সাদা গাড়ি চড়ে,
মেয়েটা সেই অকুস্থলেই রইলো একা পড়ে!
কালো রাস্তা লালচে হলো টাটকা লহু ঝরে,
নিথর দেহ ঘিরল মানুষ একটা একটা করে।
বানের জলের মতন খবর রাষ্ট্র হয়ে গেলো,
উঁচিয়ে লাঠি লাশ তুলতে পুলিশ ছুটে এলো।
লাশের পাশেই দেখা গেলো কলম-বই-খাতা,
খবর শুনেই পাগল বাপ জ্ঞান হারাল মাতা!
খুনিরা সব হেসেখেলে দিব্যি জেলের বাইরে,
মুনি ঋষির দেশে এখন আইনকানুন নাইরে!
চোখের সামনে সোমত্ত মে’ ছাই হল রে পুড়ে,
শোকে পাথর পরিবারের আগুন হৃদয় জুড়ে!
এতো বড়ো কাণ্ড হলো রাজধানীটার কাছে,
সত্যি কি আর কেষ্ট বিষ্টুর দেহে হৃদয় আছে?
থাকলে ওরা এই ঘটনায় বোবা হতে পারে ?
প্রাপ্তিযোগের সাথী ওরা মিথ্যে বলছি না রে।
পাওয়ার কিছু নাই এখানে ওরা বুঝে গেছে,
তাই ত নাকে তৈল ঢালি লেপের তলে আছে!
তুমি আমি সবাই যদি লেপের তলায় থাকি,
পামর খুনি ইজ্জত আব্রু রাখবে কিছু বাকি?
ভাল মানুষ না সেজে আর সাধ্য মতন রাগো,
পাপীষ্ঠদের শিক্ষা দিতে জাগো মানুষ জাগো।
বিষ্ণুপদ বিশ্বাস- কবি (বর্ধমান, ভারত)