দিন আনা দিন খাওয়া মাঝি গঙ্গা কূলে বাস,
অনেকগুলি পেট বাড়িতে ভাবনা বারোমাস।
এপার ওপার করে মানুষ নাও বেয়ে গঙ্গায়,
জলের সাথে লড়াই করে বছর চলে যায়।
পেটে খিদে রয়েছে তার কিন্তু সে নয় ঠক,
মাটির মানুষ চাচা জানে গোটা মানিকচক।
লকডাউনে কেড়েছে তার সামান্য রোজগার,
কয় দিনেই রসদ ফুরোয় দিন চলে না আর।
বাতের ব্যথায় কাহিল চাচা ঘরে পক্ষকাল,
ভুখ মেটাতেই কিশোর ছেলে মুন্না ধরে হাল।
গোদের ‘পরে বিষফোঁড়া হয় গঙ্গাজলে লাশ,
কিশোর জানে পরশে তার চরম সর্বনাশ!
জলে কুমির ডাঙাতে বাঘ প্রাণে মরার ভয়,
পরাণ হাতের মুঠোয় করে বাইরে যেতেই হয়!
হাতে পরা ঘড়ির কাটা দশটা পেরোয় যেই,
ডাণ্ডা হাতে নদীর ঘাটে পুলিশ এলো সেই।
হরিণ যেন বাগে পেলো ভুখা বাঘের দল,
“নিয়ম কানুন জানিস নারে বাইরে কেন বল?
মাস্ক কই রে ? ঘড়ির কাঁটা দশ করেছে পার,
দুইশো টাকা ফাইন ব্যাটা জলদি মালু ছাড়!”
মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ে ‘কিশোর’ হতবাক,
টাকার অংক শুনেই দিল মাথার মধ্যে পাক!
কয়টা লোক সে সারাদিনে করে পারাপর?
দুইশো টাকা ফাইন দেবার সাধ্য আছে তার ?
চোখ রাঙালে আসবে কিছু পুলিশ মনে সাধ,
মাঝির ছেলে দারুণ রোষে করলো প্রতিবাদ।
“ভোটকালেতে লেতা মন্ত্রীর কুথা ছেল হোশ?
তুদের খালি চোকে পড়ে চুনোপুঁটির দোষ ?
হামার মতন ‘মাচ’ তো বাবু তুর মুকেও নাই,
হামি ক্যানো ফাইন দিবো বলেন দেকি ভাই?”
এতো বড়ো বুকের পাটা ? অন্তরে নাই ভয় ?
প্রজা হয়ে রাজার মুখের উপর কথা কয়!
ছোটো মুখের বড়ো কথায় মাথায় চড়ে খুন,
পুলিশ এগোয় ডাণ্ডা তুলে নয়নে আগুন!
কলার টেনে ধুলোয় ফেলে মেরে কতক ঘা,
‘বীরপুরুষে’ ভেঙেই দেয় মাঝির ছেলের পা!
“আর কখনো প্রশ্ন করবি ?” বলেই চলে যায়,
ধুলোর মাঝে পড়েই থাকে বাঘের বাচ্ছা হায়!
খবর পেয়ে নদীর ঘাটে ছুটেই এলো বাঘ,
আর কতকাল চলবে এমন কাপুরুষী রাগ।
বিষ্ণুপদ বিশ্বাস –
কবি ও সাহিত্যিক বর্ধমান, ভারত