জীবনে সব পাওয়া গুলোর কথা সব সময় প্রকাশ হয় না। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় এই প্রাপ্তি গুলো ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। জীবন অর্থহীন হয়ে যায়। কিছু পাওয়া চর্ম চোখে দেখা যায়। আবার কিছু পাওয়া হৃদয়ের গভীরে থেকে যায়। এবং এই পাওয়া না পাওয়ার মাঝে থেকে ভালোবাসা গুলো খুব সযত্নে মেঘ রোদ্দুর হয়ে সব সময় খেলা করে। হয়তো প্রকাশের ভাষা খুঁজে পায় না। তাই আমরা নিজের মাঝে পুষে রাখি। এক সময় এই পুষে রাখা কথা গুলো আকাশে ডানা মেলে উড়তে চায়। মাঝে মাঝে বর্ষায় ডুবে যাওয়া পুকুরের নতুন পানিতে মাছ যেমন খেলা করতে করতে ভেসে যায়। ঠিক তেমন করে কিছু কথা আজ বেরিয়ে আসতে চাইছে। আমি খুব দিশেহারা হয়ে পড়েছি; পারবো তো তোমার কথা প্রাণ খুলে লিখতে।
তুমি ছিলে এবং আছো। তুমি আমার জীবনের অন্যরকম এক পাওয়া। আমি জানি তুমিও সেটা অনুভব করো। তুমি কখনও আমার একলা আকাশ, কখনও বসন্ত বাতাস। আবার প্রচন্ড শীতের গরম কাপড়ের ওম। আমি তোমাকে সব সময় অনুভবে রাখি। কিন্তু আমি না কখনও ঠিকঠাক গুছিয়ে তোমাকে নিয়ে লিখতে পারিনা। আমি জানি তোমার খুব অভিমান হয়!! কেনো তোমাকে নিয়ে একটুও লিখিনা। এমন অভিযোগ তোমার হতেই পারে? কিন্তু তুমিই বলো আমার এই স্বল্পদৈর্ঘ্য সারারণ লেখায় তোমাকে অসাধারণ ভাবে তুলে ধরার যোগ্যতা কী আমার আছে? তবুও বলি আমার বিয়ের পর তোমার লেখা চিঠিখানা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি দামি উপহার। যে চিঠিখানা আজও আমি খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছি। সময় পেলেই পড়তে বসে যাই। মাঝে মাঝে চোখ ছলছল করে ওঠে।
তোমাকে খুঁজে পাই আমি আমার সংসারের প্রতিটি স্তরে,স্তরে,ছোট,ছোট করে সাজিয়ে রাখা বাসন, শোপিচ, সাবানকেচ এমনকি ছোট্ট একটুকরো কাপড়ের সাথেও। যেগুলো ছাড়া আমার চলেই না। তুমি এমন করেই মিলেমিশে আছো আমার জীবন সংসারে। তাকে নিয়ে কেমন করে লিখি তুমিই বলো? কিন্তু
জানো তো, আমি যেন দিনে দিনে কেমন হয়ে যাচ্ছি। উচ্ছ্বাসের মাত্রা কমে গেছে। কোথায় যেন, আমার মনের আকাশে মেঘ জমে গেছে। কেনো যেন সেই শরতের মেঘ গুলো আমার আকাশে এখন আর আসা যাওয়া করে না।
সেই আনন্দময় ছুটে চলা পথ হারিয়ে গেছে; আর পথ পায় না। এমন করেই আমার প্রতিদিনের শ্রাবণ কাতর মন সারাদিন কেঁদে কেটে যখন চোখ মুছে ওঠে,
ঠিক তখনই তুমি ভাদ্রের আয়োজন নিয়ে আমার টিনের চালের ঝমঝম বৃষ্টি হয়ে হাজির হও। আমিও বৃষ্টির ছন্দে মন হারাই। তোমার এমনতরো আয়োজনে আমার মধ্যে দরুণ এক চমৎকারের জন্ম হয়। আমি চমকৃত হই। আর তখনি আমার আনন্দের সবটুকু উচ্ছ্বাস আমি বাক্সবন্দী করে ফেলি। যদি হারিয়ে যায়!! এভাবেই আমি প্রতিদিন নিজেকে ভাঙ্গা গড়ার মধ্যে থাকি। আর তুমি ফেবিকল আঠার মতন আমাদের ভেঙ্গে যাওয়া টুকরো টুকরো ভালোবাসা গুলোকে আবার জোড়া লাগিয়ে ঠিকঠাক করে দাও।
এভাবেই তোমাকে আমি খুঁজে পাই সব সময়। এবং এমন করেই বাঁচতে চাই। মৃত্যুর সময়ও তোমাকে কাছে পেতে চাই।
ইসরাত জাহান- গল্পকার ও সাহিত্যিক।