একই চায়ের দোকানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমিও সবুজস্যার চা খাই। অল্প কিছুদিন হলো সবুজ স্যারের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। দেখা হলে সালাম বিনিময় দুই একটা কথা হয়, তারপর যে যার মতন চলে যাই। সবাই ওনাকে সবুজস্যার বলেই ডাকে। সেই সূত্রধরে আমিও ওনাকে স্যার বলি। উনি স্হানীয় একটা কলেজের শিক্ষক। একজন বিনয়ী স্বভাবের মানুষ। একজন তরুণ শিক্ষক হিসাবে সমাজ পরিবর্তনের জন্য কিছু উদ্যোগের কথা গল্পে গল্পে আমাকে একদিন বলেছিলো। আমারও খুব ভালো লেগেছিলো এমন উদ্যোগের কথা শুনে। আমি হলো এই সমাজের একজন ছাপোষা মানুষ, বোধ থাকলেও সাধ্য নাই।
আমরা যে দোকানে বসে চা খাই আব্দুল্লাহ ঐ চায়ের দোকানের কর্মচারী। কতো আর বয়স হবে বারো তের বছর। কি সুন্দর ফুটফুটে চেহারা দেখলেই মনটা ভরে যায়। ছেলেটার বাবা মারা যাবার পর ওর মা চায়ের দোকানে ওকে কাজে দিয়েছে। এই বয়সে ওকে স্কুল ছাড়তে হলো অভাবের জন্য। ওর মাও মানুষের বাড়িতে কাজ করে। এভাবেই চলছে ওদের জীবন। সবুজস্যার দোকানে এসেই আব্দুল্লাহর খবর নেয়। আজ ইফতার করে যখন দোকানে চা খেতে বসেছি ঠিক সেই সময় সবুজস্যার এসে হাজির। আব্দুল্লাহর কথা জিজ্ঞাসা করতেই আমি বললাম আব্দুল্লাহ আজ ওর মায়ের সাথে অন্য আর একটা কাজে গিয়েছে আসবে একটু পর। আমি নিজের থেকেই বললাম আব্দুল্লাহর বাড়ি আমার বাড়ির কাছেই। এটা শোনার পর, সবুজস্যার আমার বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর নিয়ে বললেন একদিন আপনার বাড়িতে আসবো। আমিও খুব খুশি হয়ে বললাম ঠিক আছে।
আজ ঈদ আমি ঘুম থেকে উঠে মিষ্টিমুখ করে গোছল করে পোশাক পরে আমার বাচ্চাদের নিয়ে তৈরি হচ্ছি হঠাৎ দেখি সবুজস্যার একটা মোটরবাইক নিয়ে আমার বাড়ির ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভেতরে আসতেই বললো আমি আব্দুল্লাহর বাড়িতে যেতে চাই। আমিও সবুজস্যারের সাথে আব্দুল্লাহর বাড়িতে গেলাম। আবদুল্লাহ সবুজস্যারকে দেখে মহাখুশি। সবুজস্যার তার ছেলে ছাবিদকে দিয়ে একটা প্যাকেট আব্দুল্লাহর হাতে দিলো। ছাবিদ আব্দুল্লাহর হাতে প্যাকেটটা দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি গোছল করে নতুন কাপড় পরে নাও আমরা দুইভাই একসাথে ঈদের নামাজ পড়তে যাবো। আব্দুল্লাহর মা প্যাকেটে নিজের একটা শাড়ি দেখতে পেয়ে আনন্দ অশ্রুতে ভেসে গেল।
আমি যখন আমার ছেলের হাত ধরে ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ পড়তে যাচ্ছি; তখন দেখি আব্দুল্লাহ সুসজ্জিত পোশাকে সবুজস্যারের মোটরবাইকে ঈদগাহ ময়দানের দিকে যাচ্ছে, খুশিতে আমার মন ভরে গেল। আমি যেটা এতদিনে করতে পারিনি সবুজস্যার সেটা করে দেখালো। তখন আমি শিশুর মতন সেই ছোটবেলায় পড়া গল্প মনের অজান্তে পড়তে থাকলাম ….
আজ ঈদ মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ পথে পথে ছেলেমেয়েদের কলরব…..
ইসরাত জাহান- গল্পকার ও সাহিত্যিক।