দেয়াল
আব্দুল মতিন
গতকাল হঠাৎ ফরহাদের একটি ফোন এসেছিল।
তার এই ফোনটা বছর চারেক পর বোধহয়।খুব ভালো ছেলে ফরহাদ।গ্রামের বাড়ি ময়মনসিং। লালমাটিয়ায় একসাথে ট্রেনিং করেছিলাম প্রায় দুই মাস।ট্রেনিং এর সমাপনী দিনে ব্যক্তিগত অভিমত পোষণের সুযোগ হলো।
ফরহাদ তার তিন মিনিট বক্তব্য এক মিনিট পরেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।
95 জনের এই ট্রেনিংয়ে একজনের যদি চাকরি না হয়- তাহলে আমি ফরহাদ সেই ব্যক্তি।
আর যদি হয়েও যায় এর সম্পূর্ণ প্রাপ্তি রাজশাহীর আমার প্রিয় বন্ধু – আব্দুল মতিনের।
সাপ্তাহিক পরীক্ষাগুলো ফরহাদ আমার খাতা দেখে লিখেছিল আর সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ট্রেনিং ম্যানেজার আব্দুল লতিফ স্যার যখন বলেছিল “নন-স্টেরইডাল এন্ট্রি ইনফ্লেমেন্টারী ড্রাগ” anti-inflammatory ড্রাগ
প্রায় ১৫ থেকে ২০ বার বলার পরেও উচ্চারণ করতে পারেনি ফরহাদ।
ওকে নিয়ে অনেক কথা- ময়মনসিংহের আঞ্চলিকতা নিয়েও ট্রেনিং ম্যানেজার স্যার একটি গল্প বলেছিল।
নদী পারাপারের নৌকাতে একবার নাকি ডাকাত পরেছিল। ডাকাত চাকু হাতে বলেছিল-
” লইরিননা জিন! লইরিননা। লোইরিন চুন তো মইরিন চুন।”
সবার সেকি হাসি -তা আজও মনে পড়ে।
যাইহোক,
ফরহাদ বলল,
তোর কথা বার বার মনে পড়ে আমার। ফোনটা হারিয়ে যাবার পর তোর নাম্বারটাও হারিয়ে ফেলেছিলাম। আজ ফেসবুক আইডি থেকে তোর নাম্বারটা সংগ্রহ করলাম।
প্রায় চার বছর পরে কথা হচ্ছে তোর সাথে।
সে বলল, আমি 2021 সালের জানুয়ারি মাসে নেপাল যাচ্ছি। কোম্পানির ভিআইপি সফরে।
তুই খুশি হবি আমি এ বছরে মার্কেটিং সেলস এ সারা বাংলাদেশ দ্বিতীয় হয়েছি।
একসাথে পোস্টিং হয়েছিল ফরহাদের আর আমার।
ফরহাদ শুরু করেছিল গাজীপুরের মাওনা থেকে আর আমি কুষ্টিয়া সদরে। রাজশাহীর মোস্তাফিজ ভাইয়ের কথা মনে পড়ে!
উনি বলেছিলেন, মতিন ভাই!
যতদিন সরকারি চাকরির এজ আছে ততদিন চেষ্টা করেন। কলেজের চাকরির ভূত তখনো মাথা থেকে নামেনি।
এক বছর পড়তে না পড়তেই চাকরি ছেড়ে ফিরে এলাম বাড়িতে।
বিসিএস প্রিলিতে বাছাইয়ের পরে রিটেনে কেটে গেলাম।
আবার
মামাতো ভাইয়ের অফার – রাজধানীর মনিপুর স্কুল এন্ড কলেজ চাকরির সুযোগ হাতছাড়া করলাম।
এমফিল গবেষণার প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও কি কারণে স্টপ করতে হলো তা এখনো আমার বোধগম্য নয়।
কোথায় যেন বাধার দেয়াল !
কিছু কিছু দেয়াল ভাঙ্গা খুব মুশকিল!
আবার কিছু কিছু দেয়াল মানব জীবনে অনেক কিছু শিখিয়ে যায়।
তবুও চলছে জীবন।
আব্দুল মতিন –
সম্পাদক চেতনাবিডি ডটকম।