স্বাধীন দেশের স্বপ্নের জন্য জীবন স্রোত বারংবার গর্জে উঠে বলে যায় “দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে!লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।”(কাজী নজরুল ইসলাম)
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দুটি দেশের অবদান রয়েছে একটি হলো ভারতবর্ষ এবং অপরটি হল জাপান |
হিং জাপানের টোকিও শহরে থেকে এসে ছিল বাংলাদেশে, সে একজন সুদক্ষ আর্মি ট্রেইনার কিন্তু বাংলাদেশে সে আছে একজন সাংবাদিক হিসেবে | জাপান থেকে সে নিয়ে এসেছে টাকার পুঁজি আর কিছু অস্ত্রশস্ত্র| এই দিকে পাকিস্তান পুলিশ তার দিকে বেশ নজর দিয়ে রেখেছে |কি খাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে ইত্যাদি সব খবর পাকিস্তান পুলিশ তাদের টিকটিকি গোয়েন্দাদের থেকে নিয়ে যাচ্ছে |
নীলা এক জন মুক্তিযোদ্ধার সৈনিক, তার আসল নাম অপরাজিতা সরকার | নীলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে শিক্ষয়িত্রী শুরু করে | এই সময় ঘটে যায় এক ভয়াবহ ঘটনা, নীলার দাদা এবং বড়দিকে পাকিস্তান পুলিশ বাহিনী নিশংস ভাবে হত্যা করে, লাশ ফেলে দিয়ে যায় গ্রামের খালের পাশে | সেই আগুন টা নীলাকে কবে মুক্তিযোদ্ধার এক বীর সৈনিকে রূপান্তরিত করলো তা কেউ জানতে পারেনি |
কনস্টেবল মো.শাহজাহান মিয়া তিনি পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত সৈনিক ছিলেন | তিনি ছিলেন এই বীর বাংলার সন্তান | কিন্তু কর্মের জন্য তাকে এই কাজে নিজুত হতে হয় |
হিং কিছুদিন ধরে ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রামে আছে| সেখানে নীলার সাথে উপস্থিত অনেক মুক্তিযোদ্ধারা | চট্টগ্রামে একটা কিছু চলছিল এটা পুলিশ কর্মকর্তারা বুঝতে পারছিল কিন্তু কোন কিছু প্রমাণ খুঁজে পাচ্ছিল না।
আজ পূর্ব আকাশে দুপুর থেকে একটা কালো মেঘ ধীর গতিতে ঢাকা দিকে এগিয়ে আসছে | এই গরমে একটু ঝড়, বৃষ্টি না হলে ভালো থাকা যায়না | ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ, সকালে নীলা এবং তার মুক্তি যোদ্ধা সদস্যরা হিং সাথে দেখা করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চলো ঢাকার দিকে| কিন্তু মাঝ পথে পুলিশ বাহিনী তাদের আটক করে জিজ্ঞাসা শুরু করতেই একটি বন্দুকের আওয়াজে চারপাশ এক ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠলো | মো.শাহজাহান মিয়া দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি নিজেও এই স্ফুলিঙ্গের আচ যে করেনি তা নয় | কিন্তু যা হলো তাতে আর মুক্তিযোদ্ধাদের আটকে রাখা যাবেনা | তিনি তখন ওয়ারলেসে খবর দিলেন কিন্তু কনো উত্তর এলো না অপরপক্ষ থেকে | ঠিক সেই সময় কেঁপে উঠলো ঢাকা শহর | ছাত্র, ছাত্রী তাদের বিক্ষোভের আগুনে ঝলসে উঠছে |এক সুপ্ত আগ্নেয় গিরি জেগে উঠেছে| কনস্টেবল মো.শাহজাহান মিয়া মনে মনে ভাবলেন; “এই লাভার তাণ্ডবে আজ পাকিস্তান কে পরাজিত হতেই হবে”|
হিং মাটিতে রক্তাক্ত ভাবে পড়ে আছে | কোন ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে তার কণ্ঠে ভেসে এলো একটি বাংলা গান –
” আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি |’’
অন্যদিকে নীলা বাকি মুক্তি যোদ্ধার সাথে ঢাকার প্রবেশ পথে লড়াই শুরু করলো | পাকিস্তানের সৈনিকদের একটার পর একটা গুলি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের শরীরে প্রবেশ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল | পাকিস্তান সেনাবাহিনী দের মুখে তখন হাসি,তারা তখন ও জানত না ঠিক এর পেছনে যে আরো কয়েক শ’ কোটি মানুষের ভিড় আসতে আসতে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে | আর সেই দলে আছে আমাদের সকলের প্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যে কনো গুলি, লাঠি কিছুতেই ভয় পায়না | আর তাকে দেখে এগিয়ে এসেছে সমগ্র বাঙালি জাতি|
এতো মানুষের সৈন্যদল দেখে পাকিস্তান আর্মি এবার ভয় পেতে শুরু করলো | অন্যদিকে ভারতবর্ষের সৈনিক দল আসতে আসতে পাকিস্তান সৈনিক দের পরাজিত করে মুক্তি যোদ্ধাদের রাস্তা পরিষ্কার করে যাচ্ছিলো |
এরি মধ্যে নীলাদের দল শেষ প্রান্তে চলে এসেছে | তখনো ভারতীয় বাহিনীর আসতে অনেক দেরি কিন্তু এই সময় পাকিস্তান সৈনিকদের আক্রমণ না করলে পরে তারা আবার একত্রে আরো শক্তি শালী হয়ে উঠবে | নীলা বারুদ দেখতে গিয়ে মাথা হাত দিয়ে বসে যায় বারুদ যা আছে তাতে এই যুদ্ধ বড় জোর ৩৫ মিনিট করা যাবে |ভারতীয় সৈনিক যতক্ষণে পৌছাবে ততক্ষণে অনেক সময় চলে যাবে | সবে ভারতীয় সৈনিকেরা ময়মনসিংহে প্রবেশ করেছে | এখনও তাদের আসতে আরো অনেক সময় বাকি | নীলা তখন মতিন দাদার সাথে ফন্দি আটতে শুরু করলো | | মতিন দাদা আসলে ইউনিভার্সিটি শিক্ষক |নীলা দাদা বলে কারণ, নীলার পাশের বাড়িতে মতিন দাদা থাকেন ||
দুটি পৃথক দল দুই দিক থেকে পাকিস্তান সৈনিকদের উপর আক্রমণ করবে | তাই করলো, এই ভাবে ওরা পাকিস্তান সৈনিকদের আটকাতে পারল কিন্তু নিজেদের আটকে রাখতে পারল না এই মাতৃভূমিতেই শহীদ হলো | ওরা দুই ভাই বোন চোখের সামনে দেখলো বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে আছেন, চশমা খুলে তাঁর আঁখি দিয়ে অবিনরতো পানি বয়ে যাচ্ছে | আর পশ্চিম আকাশ পরিষ্কার হয়ে দেখা যাচ্ছে নতুন জন্মভূমির পতাকা | সোনার বাংলার পতাকা |স্বাধীন বাংলা দেশের পতাকা |
______এখানে কিছু কথা থেকে যায় ___
১ ) আজও কি নীলা আর মতিন দাদা আসে স্বাধীনতা দেশটি দেখতে?
২) মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ভালো আছেন তো?
৩) বাংলাদেশের সব ধর্মের লোকেরা মিলেমিশে আছে তো ?
৪) বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন কি সফল হলো ?
৫) হিং মত ভিন্ন দেশের লোকেরা বাংলাদেশে কি সুখে আছে?
উত্তর আপনারা আপনাদের মনে দেবেন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে | দেখবেন ভুল উত্তর হলে আগামী কিন্তু আপনাকে ভুলে যাবে ||
রাজদীপ মজুমদার – কবি, সাহিত্যিক ও এডমিন চেতনায় সাহিত্য।