গাড়ি চণ্ডীগড়ের দিকে এগিয়ে চলো |চণ্ডীগড় আসতে একটা বেশ বড় ধাবা আছে,”পাল ধাবা”| গাড়ি পার্ক করে সকলে একসাথে ধাবার ভেতরে প্রবেশ করলাম | নিকিতা কে জিজ্ঞাসা করলাম,”কি রে তোর শরীর এখন কেমন আছে?কেমন লাগছে?” নিকিতা সকল প্রশ্নের উত্তর ওর সুন্দরী মুখের হাসি দিয়ে বলে উঠলো “এখন তোরা আমায় খাবার দে,আমার খুব খিদে পেয়েছ” |মনে মনে বলে উঠলাম যাক মেয়েটা তবে এখন বিপদ মুক্ত, যাক অনেক ভালো আছে|
খাবার টেবিলে বসে আমাদের সকলের মধ্যে এক বিশাল আলোচনা চলছে|শিমলার হোটেলে থাকার লিস্ট নিয়ে এক বিশাল তর্ক পর্ব যখন তুঙ্গে,এমন সময় জোয়া নিকিতার দিকে আঙ্গুল তুলে কি দেখে ভয়ে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেলো| মইন এইসব দেখে এবার রেগে সবার দিকে তাকিয়ে একটু কর্কশ স্বরে বলতে লাগলো “হচ্ছেটা কি?এক জনের পর আরেক জনের শরীর খারাপ, তোরা এই ভাবেই সময় নষ্ট কর”| জোয়ার চোখে মুখে পানি দিতে জ্ঞান ফিরে এলো, আর আমাদের দেখে একটা আতঙ্ক ভরা কণ্ঠস্বরে বলতে থাকে, সে নাকি নিকিতার মাথার পিছনে একটা রক্তাক্ত চোখ দেখছে,মনে হচ্ছে নিকিতার মাথার পিছনে আরেকটি মুখ|আমরা তখন সবাই মুখ চেপে হাসতে থাকলাম| আর নিকিতা একটু অবাক হয়ে জোয়ার কথা শুনে মাথার চুলে হাত দিয়ে ঠিক করতে থাকলো | তবে আমার মনে একটা প্রশ্ন এলো এই কথাটা বেশ কিছুক্ষন আগে আমায় জানো কে বলো,মনে করতে পারছিনা| হাঁ,এই একি কথা কিছুক্ষন আগে সুনীল আমায় বলছে| সুনীল গেলো কোথায়? এই তো সে কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে কথা বলছিলো?এখানে তো ওকে দেখছিনা,মোবাইলে ও পাচ্ছিনা, তবে গেলো কোথায়?এই সব ভেবে যখন কথাটা মইন কে বলতে যাবো দেখি সুনীল মইনের সাথে কথা বলছে | আমি গিয়ে সুনীল কে জিজ্ঞাসা করতে সে হাসতে হাসতে বলো “ইয়ার তুই সবচেয়ে মজার লোক, তুই একা একা নিজের মনে কি সব কথা বলে যাচ্ছিলে”| মইন ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো |আমি কিছু না বলে শুধু নিজের অন্তরে ভেবে গেলাম কি সব ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছিনা |
মইন গাড়ি স্টার্ট নিয়ে শিমলার দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে চলো|প্রকৃতির এই ঠান্ডা বাতাসটা আরো বেশি করে আমাদের কাছে ধেয়ে আসতে লাগলো | ওই দিকে আকাশের বুকে সূর্যের লাল আভার সুন্দরী তে মনটায় একটা হালকা প্রেমের বাতাস উঁকি দিয়ে গেলো |আমিও গাড়ির কাঁচ দিয়ে তাকে দেখতে গিয়ে বিস্মিত হয়ে গেলাম | সত্যি তো ওটা কি ওর মাথার পেছনে? আবার চোখটা ভালো করে কচলে দেখলাম কোথায় কে,আমার সামনে এক সুন্দরী নারীর এলোমেলো কেশের এক রাশ সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়েছে একটা মিষ্টি মুখে| কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যে এই ঘোর কেটে সামনে নতুন বিপদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো তা তখনো জানতামনা |
শিমলা যাবার পথে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে উপরে দিকে যাবার সময় প্রকৃতির সৌন্দর্য্য সকলের মনে এক অদ্ভুত সুন্দর শক্তির বিকাশ করে, যা মনের অন্তরের শিল্পকলা কে সুন্দর ভাবে জাগরিত করে এক নতুন রূপ গড়ে তোলে| কিন্তু সেই সৌন্দর্য্যে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতির বুকে কালো মেঘ গুলি|মেঘ গুলি রাক্ষসের মতন আমাদের দিকে ধেয়ে আসছিলো |আর যখন এলো সে কি বৃষ্টি সাথে তেমনি তেজ বাতাস | এই দিকে গাড়ির চাকা গেছে ফেটে |সামনে কনো গাড়ির গ্যারেজ নেই|তাই আমরা সকলে ভাবছি কি করা যায়,এমন সময় সুরাজ,নিধী আর অরিজিৎ একটি পোড়া বাড়ি দেখিয়ে বলো ওখানেই না হয় এখন থাকি বৃষ্টি কমলে দেখা যাবে কি করা যায় |আমি মানলাম না|সাথে মনটা কেমন কুডাকছে|সবাই হাসতে শুরু করেছে, এমন সময় এক তেজময় হাওয়া আমায় বলে গেলো গাড়িতে থাকলেই আমার বিপদ,অগত্যা এই বৃষ্টিতে গাড়িতে থাকা বোকামি হবে বলে সকলের সাথে আমিও ওই বাড়িটির উদ্দেশ্যে এক দৌড় দিয়ে পৌঁছে গেলাম | বাড়ির বোর্ডের লেখাটা আর পড়া হলো না…….
রাজদীপ মজুমদার – কবি, সাহিত্যিক ও এডমিন চেতনায় সাহিত্য।