Take a fresh look at your lifestyle.

নারীর সৌন্দর্য

488

আমার খুব কাছের কিছু আত্মীয় -স্বজন আছেন। এদের দৃষ্টিতে পৃথিবীর কেউই সুন্দর নয়। তারা যে আহা – মরি সুন্দর সেটাও নয়। মোট কথা মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে তর্জমা করার একটা বদ অভ্যাস আছে। এদের সামনে পড়লে মনে হতো, এদের চোখের মধ্যে কয়েকহাজার ভোল্টের লাইট জ্বলছে, যে আলোয় এরা মানুষের ভেতরের হৃদপিন্ডটা পর্যন্ত দেখতে পায়। এবং খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দোষ, ত্রুটি এগুলো বের করে আনেন, এবং অন্যের কাছে সেটা বিশ্লেষণ করেন।

বছর পাঁচেক আগে শ্বশুর পক্ষের এক আত্মীয়ের বিয়ে হয়েছে, আমার একটা বাচ্চার বয়স এক বছর আরেকটা বাচ্চা রওনা দিয়েছে, তখনও ল্যান্ড করেনি পৃথিবী নামক গ্রহে। সে কারণে বিয়েতে সবাই উপস্থিত ছিল, শুধু আমি ছাড়া।
দূরের আত্মীয়ই বলা যায়, সেজন্য গত পাঁচবছর সেই নতুন বউকে স্যোশাল মিডিয়ায় ছাড়া সরাসরি দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি।

বেশ পরিপাটি, সুন্দর, হিজাব পরিহিতা এক রমনীকে প্রায় ছবি পোস্ট করতে দেখতাম ফেসবুকে। তিনি উচ্চশিক্ষিতা, চাকরিজীবী, ভালো বংশের ধনী পরিবারের মেয়ে। আমার শ্বশুর পক্ষের এক আত্মীয়ের বউ। আমি ছবি পোস্ট করার সাথে সাথে সবার আগে লাভ রিয়্যাক্ট দিয়ে, কমেন্টসে ওয়াও! নাইচ, সুন্দরী লিখে দিয়ে আসতাম।

তার বাহারী ঢংয়ে হিজাব পরা ছবি দেখলে মনে মনে ঈর্ষান্বিত হতাম। আমি কেন এভাবে হিজাব বাঁধতে জানি না।

গত কয়েকদিন আগে সেই ভদ্রমহিলাকে প্রথম সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। একজন মানুষের সৌন্দর্য কিন্তু কখনোই গায়ের রংয়ের মাধ্যেমে প্রকাশ পায় না। যাই হোক আমি ভেবে কোনোভাবেই কুল কিনারা করে উঠতে পারিনি। যে মানুষগুলো সারাক্ষণ অন্যের বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে তর্জমা করত, সেই তারাই ভাবীকে কয়েকবার, কয়েকদিনের জন্য দেখেছেন। অথচ ভুল করে একবারও তার সৌন্দর্য নিয়ে একটা মন্তব্য পর্যন্ত করেননি।

কেন? কেন? কেন?

কেন? জানেন! যে মেয়েকে তার স্বামী সম্মান করে, সে মেয়েকে তার স্বামীর পরিবার মূল্যায়ন করে। যে মেয়েকে তার শ্বশুর পরিবার মূল্যায়ন করে, সে মেয়েকে তার আত্মীয় -স্বজনও সমীহ করে।

সে মেয়ের বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে মন্তব্য করার দুঃসাহসও কোনো আত্মীয়-স্বজন দেখাতে পারে না।

আজ সন্ধ্যায় এক মেয়ে ইনবক্সে নক করেছে। তার কষ্ট আমার সাথে শেয়ার করে হালকা হতে চায়, পরামর্শ চায়।
মেয়েটার ভাষ্যমতে সে এমবিএ পাশ একটা মেয়ে। শাশুড়ি এবং স্বামী দেখে শুনে বিয়ে করিয়েছে। একটা সন্তানও আছে তাদের।
অথচ গায়ের রং কালো আর উচ্চতা কম হওয়ায়,তাকে শাশুড়ির কাছ থেকে এমন এমন নোংরা মন্তব্য শুনতে হয় যে সে কয়েকবার সুইসাইড করতে চেয়েছে। স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে এই নরকীয় অত্যাচার থেকে মুক্তি চায়। আমাকে টেক্সট করার আগ পর্যন্ত আজ সারাদিন সে না খেয়ে ছিল, শধুমাত্র শাশুড়ির দৃষ্টিতে অসুন্দর হওয়ায় তাকে খেতে পর্যন্ত ডাকেনি।

আমার মনে হয় যারা পরের মেয়েকে অসম্মান আর অত্যাচার করে, তাদের জন্য বাহ্যিক সৌন্দর্যটা একটা বায়না মাত্র। আপনি সুন্দরী হলেও এরা অপমান করত। আর সবচেয়ে বেশি করত আপনার স্বজাতি নারী বোনটি। একজন মানুষের সৌন্দর্য তার গায়ের রং বা উচ্চতার মাধ্যেমে প্রকাশ পায় না।

আপনি একজন এমবিএ পাশ মেয়ে। আপনার ভেতরটা হতে হবে ইস্পাতের মতো কঠিন ও শক্ত। কেউ আপনাকে সৌন্দর্য নিয়ে মন্তব্য করলে আপনি ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেবেন, যেটা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
নিজের দক্ষতা বাড়ান, আপনি উচ্চশিক্ষিত মেয়ে নিজেকে এমন শিখরে প্রতিষ্ঠিত করুন, যারা আপনার উচ্চতা নিয়ে কথা শোনাচ্ছে, তারা যেন আপনার নাগাল ছুঁতেও না পারে, মন্তব্য করবে কীভাবে।

 

 

কামরুন নাহার মিশু – লেখক ও সাহিত্যিক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.