আব্দুল কুদ্দুস চাচা ধান নিড়ানোর কাজে খুব পটু।অন্য কাজে কাঁচা তা কিন্তু নয়। আউশধান আব্বা খুব করত, যে ধান বুনা হয় তাকেই আউশধান বলা হয়। জেহের আলী, আব্দুল কুদ্দুস, ইসাহাক আলী, সাইদ আর আব্বা ধান নিড়ানোর কাজে ব্যস্ত। বেলা বারোটা বাজতে কিছু সময় দেরি আছে।
রমজান মামা খবর দিল রাতে সেনপাড়া প্রাইমারি স্কুল মাঠে বায়স্কোপ চলবে। কাজের লোকদের মধ্যে অন্যরকম শিহরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমি টু -থ্রি তে পড়লেও বেশ মনে আছে আব্দুল কুদ্দুস চাচার কণ্ঠে নজরুলের গানগুলো।
“আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়… ”
“খোদার প্রেমে শরাব প্রিয়ে বেহুশ হয়ে রই পড়ে… ”
বহু বার শুনেছি দরদ ভরা গান।
জেহের আলী মামা গ্রামের স্কুলের বিভিন্ন যাত্রা পালায় কমিডি অভিনয় করতেন। শত শত মানুষের করতালি, মুখ দিয়ে শিস বাঁশি বাজিয়ে প্রফুল্লতা প্রকাশ করত।
মাগরিব পরে কাজের সবাই খেতে এসেছে। আম্মার হাতের ইলিশ আনন্দের সাথে খেলাম।
আজ আমার একই বায়না বারবার বায়স্কোপ দেখতে যাব সবার সাথে।
আব্বা কিছু বকাবকি করছে, কিছু ক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বে – যত্তো সব ঝামেলা।
আমার মন খারাপ দেখে কুদ্দুস চাচা আমার দায়িত্ব নিলেন, হাকিম পুরী জদ্দা দিয়ে পান খেয়ে সবাই উঠলো, এবার শুরু হলো কুদ্দুস চাচার দায়িত্ব পালন।
কাঁধে নিলেন আমাকে, আমার দু পা দু কাঁধে।
ধান আর পাটের ক্ষেত মাড়িয়ে যেতে হচ্ছে সেনপাড়া প্রাইমারি স্কুল মাঠে।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের প্রথম স্কুল এটি।
রাত ৮ টার পর, বিশাল সাদা কাপড়ের পর্দার উপরে বড় বড় ছবি দেখা যাচ্ছে। উনিশ শতকের শেষের দিকে সংস্কৃতির বিস্তারে এটি বেশ ভূমিকা রাখে।
বায়স্কোপ গ্রামীণ মানুষের বিনোদন চাহিদা মেটাতে সফল হয়েছিল বৈকি।
একটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে – ডাইনামিক ইঞ্জিনের সাহায্য চালিত সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে।
ছবির নাম ” বেদের মেয়ে জোসনা”। এ ছবিটি বাংলার কোটি মানুষের মনোরঞ্জন করেছিল।
কতক্ষণ দেখেছিলাম মনে পড়ে না তবে অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম।
আব্বার কথা সঠিক হলো অর্ধেক সিনেমা দেখে ঘুমিয়ে গেলাম।
আবারও কুদ্দুস চাচার কোলে করে বাড়ি ফেরা। কত বৈচিত্র্যময় সেই দিনগুলো।
আজও মনে মনে হাসি আর বায়স্কোপ খুঁজি।
আব্দুল মতিন –
সম্পাদক চেতনা বিডি ডটকম ।