একদা হযরত ঈসা (আঃ) এক পাহাড়ের উপর সালাত আদায় করছিলেন।এমন সময় তাঁর নিকট ইবলিশ এসে বললো, আপনি কি এই দাবি করেন যে, প্রতিটি বিষয়ই তকদির অনুযায়ী সংঘটিত হয়? ঈসা (আঃ) বললেন, হ্যাঁ। ইবলিশ বললো, তাহলে আপনি এ পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়ুন এবং বলুন এটাই আমার তকদিরে ছিল। ঈসা (আঃ) বললেন, ওহে পাপিষ্ট শয়তান, আল্লাহ তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করতে পারেন কিন্তু বান্দারা কখনো আল্লাহকে পরীক্ষা করতে পারে না।
ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তিনি ছিলেন বনি ইসরাইল বংশের সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসুল। তিনি একজন সুসংবাদদাতা। তিনি নবী করিম (সঃ) এর আগমনের সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, শেষ নবীর নাম হবে আহমদ। তাছাড়া, নবীজি (সাঃ) সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তিনি মানুষকে জানিয়ে গিয়েছিলেন, যাতে পরবর্তীতে মানুষ নবীজি (সাঃ) কে চিনতে ও মানতে পারে। তিনি তাওরাত কিতাবের সত্যায়নকারি ছিলেন। তিনি আল্লাহর কিতাব ইঞ্জিল নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বনি ইসরাইলীদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর নির্দেশ নিয়ে এসেছিলেন। সে সময় ইহুদি সম্প্রদায়ের একাংশ তাঁকে অবিশ্বাস করলো। তাঁর মা’কে অপবাদ দিল এবং তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নিলেন। তিনি আল্লাহর হুকুমে আবার পৃথিবীতে আসবেন। তখন তাঁর পরিপূর্ণ ও স্বাভাবিক মৃত্যু বা ওফাত হবে। তিনি উম্মতে মোহাম্মদী হিসেবে আসবেন এবং বিদ্যমান অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। ইয়াজুজ-মাজুজ ও দাজ্জালকে পরাভূত করবেন। বিশ্বাসীদের রাজ্য কায়েম করবেন। তিনি ইমাম মেহেদী (আঃ) কে তাঁর নেতা হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁকে সহায়তা করবেন।
ঈসা (আঃ) এর মা মরিয়ম আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দি। ঈসা (আঃ) পিতা ব্যতীত জন্ম লাভ করেন। তাই তাঁকে মরিয়ম পুত্র ঈসা বলা হয়। আদম (আঃ) এর জন্ম পিতা-মাতা বিহীন। এটা আল্লাহপাকের ইচ্ছা ও ক্ষমতা। তিনি যখন যা ইচ্ছে করেন শুধু বলেন, ‘কুন্’ অর্থ হও, অমনি তা হয়ে যায়। আল্লাহর এই ক্ষমতাকে বুঝলে ঈসা (আঃ) এর জন্মকে সঠিকভাবে বোঝা খুব সহজ। ঈসা (আঃ) এর সম্মানিতা মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারীদের একজন। তাঁর জন্মও আল্লাহর ইচ্ছা ও বিশেষ রহমতের পরিচয় বহন করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নাম রেখেছিলেন মরিয়ম। পবিত্র কোরআনে তাঁর নামে একটি সুরা আছে, যার নাম সূরা মরিয়ম। কোরআন পাকের ১৯তম সূরা। নবীজি (সাঃ) মরিয়ম (আঃ) কে জান্নাতের শ্রেষ্ঠ ৪ জন মহিলার অন্যতম হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মরিয়ম (আঃ) এর পিতার নাম হযরত ইমরান (আঃ)। কোরআন পাকে ‘আলে ইমরান’ নামে একটি সুরা আছে। ইমরান দম্পতি গর্ভাবস্থায় তাঁদের সন্তানকে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করেন। তাঁদের ধারণা ছিল সন্তান ছেলে হবে, কিন্তু প্রসবের পর দেখা গেলো মেয়ে। তখন তাঁরা ব্যথিত হলো। তখন আল্লাহ পাক বলেন, এই কন্যার মতো কোনো পুরুষ নেই। আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি পাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
মরিয়ম বিনতে ইমরান ছিলেন বিশ্ব নারী সমাজের শীর্ষস্থানীয়া এবং আল্লাহ মনোনীত পবিত্র ব্যক্তিত্ব, সর্বদা আল্লাহর রুকুকারী ও সিজদা কারী। আল্লাহ তাঁকে সতী-সাধ্বী এবং আল্লাহর আদেশ ও বাণীসমূহ বাস্তবায়নকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ নিজেই তাঁর নাম রাখেন মরিয়ম।
আল্লাহর নবী ‘ঈসা’ আল্লাহর দেয়া নাম। তিনি মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় বক্তব্য প্রদানকারী / জন্মান্ধকে দৃষ্টিশক্তি ফেরত দিতে ও কুষ্ঠ রোগীকে আল্লাহর রহমতে সুস্থ করতে, এবং মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে সক্ষম ছিলেন। এ সব কিছুই ছিল আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে আমরা মু’জেজা হিসেবে জানি। এমন আরও অনেক মু’জেজা ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন হযরত ঈসা (আঃ)। মুসলিম সমাজে ঈসা (আঃ) একজন নবী ও রাসূল এবং সম্মানিয় ব্যক্তিত্ব।
শোয়েব – কবি ও সাহিত্য।