#ইদের_সেকাল_একাল
ইদ মানেই হাসি, ইদ মানেই আনন্দ। ইদ আসার আগ পর্যন্ত থাকে নানা জল্পনা কল্পনা। শেষ হয়ে গেলেও এর রেশ থাকে আরও সাতদিন। সময়ের সাথে সাথে ইদের আনন্দের ধরন বদলালেও আমার কাছে ইদের সুখানুভূতি ঠিক একইরকম আছে।
সেকালের ইদের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে ইদের জামা কেনার কথা। চার পাঁচ রোজা যেতে না যেতেই আমার অস্থিরতা শুরু হয়ে যেত জামা কেনার। বারবার মায়ের কানের সামনে ঘ্যানঘ্যান করে বলতাম, “দশ রোজা চলে গেলে কিন্তু ভালো কোন জামা মার্কেটে থাকবে না মা, পরে আমি জামা পাব কোথায়?” আমার প্যানপ্যানানির জ্বালায় হোক বা আদর করেই হোক মা দশ রোজার আগেই আমাকে নিয়ে ছুটতেন মার্কেটে। অনেকে শুনলে হয়ত হাসবেন, একালে এসেও আমার মনে ঠিক একই অস্থিরতা কাজ করে তবে তা আমার জন্য নয়, আমার সন্তানদের জন্য। নিজের জন্যও না কেনা পর্যন্ত শান্তি পাই না।
সেকালের ইদে আমার কাজ ছিল সেমাইয়ের ঘ্রাণে ঘুম থেকে জেগে প্রতিটি ঘর গুছানো আর যে আসবে তাকেই সেমাই, নুডুলস আর চটপটি বেড়ে দেওয়া। আম্মা সেই ভোরবেলা ফজর পড়েই হেঁসেলে ঢুকতেন। আর আমি গোসল করে সুন্দর ভাবে সাজুগুজু করে অপেক্ষায় থাকতাম কখন বান্ধবীরা আসবে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে যাওয়ার জন্য আর সেলামি নেওয়ার জন্য। একালে আমি ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠে হেঁসেলে ঢুকি। সবকিছু গুছিয়ে ছেলে আর বর নামাজ থেকে আসার আগেই নিজে পরিপাটি হয়ে বসে থাকি বরের কাছ থেকে সেলামি পাবার আশায়।
সেকালের ইদে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে তৃপ্তি পেতাম। একালে এসে নিজের হাতে রান্না করে সবাইকে খাইয়ে তৃপ্তি পাই। সেকালের ইদের জন্য মন খারাপ হয়, তবে আফসোস হয় না। কারণ সময় চলে তার আপন গতিতে। তাই যখন যে পরিস্থিতিতে আছি সেটাতে সুখ খুঁজে নিলে কোন আনন্দই ফিকে হয়ে যায় না।
মাহমুদা আক্তার নীতু- কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক।