প্রায় একযুগ আগের কথা। কাতারের এক ধনাঢ্য নারীর গল্প বলি। মধ্যবয়সী রমণীর ক্যানসার হলো। দোহার সবচেয়ে বড় ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানালেন, তিনি আর মাত্র ছয়মাস পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন। তাকে সেবাযত্ন করবার জন্য সর্বদা নিয়োজিত থাকতো পাঁচ-ছয় জন মহিলা। এই পাঁচ-ছয় জন কাজের মহিলার মধ্যে একজন ছিলো নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এবং সে ছিলো বাংলাদেশী নারী। ধনাঢ্য নারী খেয়াল করলেন, বাংলাদেশী নারীটি তাকে ভালোভাবে সেবাযত্ন করে, কিন্তু অধিকাংশ সময় তার মন খারাপ থাকে। তিনি বাংলাদেশী সেবিকাকে তার মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে সে বলে, বাংলাদেশে তার দেড় মাসের এক দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তান আছে। শিশুর কথা মনে উঠলেই তার মন খারাপ হয়ে যায়।
কথা শুনে ভদ্র মহিলা একটু নড়েচড়ে বসলেন। তিনি জানতে চাইলেন দেড় বছরের শিশুকে রেখে সে কেন প্রবাসে চাকুরি করতে এসেছে? জবাবে বাংলাদেশি নারী শ্রমিক তার অভাবের সংসারের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ভদ্র মহিলার মনে দয়ার উদ্রেক হলো। তিনি বললেন, তোমাকে দুই বছরের বেতন দিয়ে দিচ্ছি সাথে ফিরতি ফ্লাইটের টিকেটও। তুমি দেশে গিয়ে তোমার সন্তানকে দেখাশোনা করবে- এটাই তোমার চাকুরি। আমি তো ছয় মাসের মধ্যেই মারা যাবো। তবে তোমাকে এমন একটি ব্যবস্থা করে যাচ্ছি যাতে তুমি দুবছর পরে এসে আমার ফার্মে অনায়াসে যোগদান করতে পারো। যা কথা তাই কাজ। দুবছরের বেতন ও ফিরতি টিকেট নিয়ে শ্রমিক মহিলা ফিরে আসে বাংলাদেশে।
ঠিক দুবছর পর বাংলাদেশী শ্রমিক মহিলা নিদির্ষ্ট তারিখে কাতারে ফিরে যায়। মনিবের বাড়ি গিয়ে সে অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করে, তার মনিব বেঁচে আছেন। ধনাঢ্য নারী দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন। তিনি এখন রীতিমতো সুস্থ। বাংলাদেশী শ্রমিক যথা সময়ে ফিরে এসেছে দেখে তিনি খুব খুশি। কুশল বিনিময়ের পর বাঙালি শ্রমিক তার মনিবের নিকট জানতে চায়- তার সুস্থ হয়ে ওঠার রহস্য কী? ধনাঢ্য রমণী নির্বিকারভাবে জানান, তিনি নিজেও এই রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি। আসমানের দিকে তাকিয়ে নিজের বুকের বাম পাশে হাত রেখে বললেন, আমার মনে হয় তোমার ও তোমার দুগ্ধপোষ্য শিশুর প্রতি আমি যে এহসান করেছি- কেবলমাত্র এই কারণেই মহান আল্লাহ্ আমাকে রোগমুক্তির ব্যবস্থা করেছেন এবং আমার হায়াত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি আরও বললেন, মানুষ যখন অন্যের প্রতি এহসান করেন তখন মহান আল্লাহ্ ঐ এহসানকারী ব্যক্তির উপর এহসান করেন।
রফিকুল্লাহ কালবী- কবি ও সাহিত্যিক।