এক দামাল ছেলের কথা বলছি। যে পাড়ার ছেলেদের সাথে পুকুরের টলমল পানিতে সাঁতার কাটতো। পাখীর ডাকে ঘুম ভাঙত তার। মনে সাধ জাগতো সকাল বেলার পাখী হবার। সবুজ পাতার ফাকে ডাঁসা পেয়ারা আর গাছের শাখায় শাখায় তর তর করে বেয়ে বেড়াতো কাঠ বিড়ালী। তাই দেখে তার কবি মন জেগে উঠতো। সাধ জাগত কবিতা লিখার। সে মুখে মুখে ছড়া বানাতো আবার তাতে সুর বেঁধে সুরেলা গলায় গান গাইতো। নাম তার দুখু মিয়া। তিনি আর কেউ নন আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের মে মাসের ২৪ তারিখ (১১, ই জৈষ্ঠ ১৩০৬) পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক পীর বংশে জন্ম গ্রহন করেন। পিতার নাম কাজী ফকির আহম্মেদ। মাতা জাহেদা খাতুন। তাদের চার পুত্রের অকাল মৃত্যুর পর নজরুল ইসলামের জন্ম হয়। তাই তার নাম রাখা হয় দুখু মিয়া।
কাজী নজরুল ইসলামের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন বিহার প্রদেশের অধিবাসী। আসানসোলে এরা কাজীর দায়িত্ব পালন করতেন। তার ভাই বোনদের মধ্যে “কাজী আলী হোসেন”, “কাজী সাহেব জান” এবং “উম্মে কুলসুম” এর নাম জানা যায়। নজরুল ইসলামের দাদার নাম ছিল কাজী আমিন উল্লাহ।
কাজী নজরুল ইসলামের বাবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাঝারের খাদেম ছিলেন। পিতার সাথে তিনিও মুয়াজ্জিনের কাজ করতেন। স্থানীয় মাদ্রাসায় তিনি কোরআন ও ধর্মত্বত্ত্ব অধ্যায়ন শুরু করেন।
এক সময় নজরুল ইসলাম মক্তব থেকে নিন্ম মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তির্ন হয়ে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন। একই সাথে হাজী পালোয়ানের সেবক এবং মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসাবে কাজ শুরু করেন। এই সময় কাজের মাধ্যমেই তিনি অল্প বয়সেই ইসলামিক মৌলিক আচার-অনুষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ট ভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পান। যা পবর্তীকালে তার সাহিত্য কর্মে বিপুল ভাবে প্রভাবিত করে। তিনিই বাংলা সাহিত্যে ইসলামি চেতনার চর্চা শুরু করেন।
দিল আফরোজ রিমা- কবি ও সাহিত্যিক, ঢাকা।