প্রিয় মা,
মাগো আমার!
আমি তোমার কাছে আজ আসতে পারলাম না।
সারাটা বছরের ছুটি জমিয়ে রেখেছিলাম,
প্লেনের টিকিটও কেটে রাখা ছিল।
জানো মা!
তোমার জন্য এই মা দিবসে,
আমি এক জোড়া সোনার বালা কিনেছি,
আরও কত কী কিনেছি!
আমি এক একটা টাকা উপার্জন করি,
আর তোমার এক একটা স্বপ্ন পূরণের আনন্দে মাতি।
আমি আমার খোলা ও বন্ধ চোখে,
তোমার মুখের হাসি দেখি মা।
খুব ইচ্ছে ছিলো এই মা দিবসের আগের দিন রাতের ফ্লাইটে,
তোমার কাছে আসব।
ইচ্ছে ছিল মা দিবসের সাথে,
এবারের ঈদটাও তোমার সাথেই কাটাব।
মাগো!
কতদিন তোমাকে দেখি না,
এই পরবাসে আসার পর আমার বাবাটা চলে গেল।
আমি বাবাকে তার না পাওয়া খুশি গুলো ফিরিয়ে দিতে পারলাম না,
পারলাম না তেমন কোনো দায়িত্ব পালন করতে।
বাবাকে একবার শেষ দেখাটাও দেখতে পারলাম না,
আমার সন্তান জনম স্বার্থক হতে হতে;
কেমন ব্যার্থ হয়ে যায় মা!
আমার জমিয়ে রাখা ছুটি গুলো জমেই রইল,
আমার আর এবারও তোমার কাছে আসা হলো না।
পৃথিবী ব্যাপি নানা রকমের লক ডাউন,
এই শহর ছেড়ে হয় তো কোনোভাবে তোমার কাছে যাওয়া গেলেও,
ফিরে আসার অনেক জটিলতা।
মধ্যবিত্তের জীবন!
আহা জীবন আমাদের!
এই মধ্যবিত্ত জীবনটা আরও কঠিন করে দিল,
একটা করোনা অণুজীব!
এক ক্ষুদ্র অথচ ভয়াবহ এই অণুজীবের কাছে,
আমরা কেমন জিম্মি হয়ে গেলাম।
কত কত মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে রোজ,
কেউ সময়ের আগে কেউ-বা ধারণা করা সময়ে।
আচ্ছা মা!
মৃত্যুর কি কোনো সময় থাকে নিদৃষ্ট করে!
কী জানি মানুষ তার নিজের মতো করে কত কী নির্ধারণ করে নেয়!
মাগো!
আমাদের কী আর কোনোদিনই স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হবে না মা!
আবার কী নতুন শাড়ির গন্ধ নিয়ে,
তোমার কোলে ঈদ উদযাপন করতে পারব না মা!
পারব না মা দিবসে তোমাকে বুকের মধ্যে খুব করে জড়িয়ে ধরতে!
কী জানি!
আমি জানি না মা।
আমি জানি না যে,
আমার আর তোমার কাছে ফেরা হবে কি-না!
আমার মা সুস্থ আর নিরাপদ থাকবে কি-না!
পৃথিবীর সকল মা’কে এই মহামারি করুণা করবে কি-না!
মাগো!
প্রতিদিনের মৃত্যু সংবাদ গুলো আমাকে অস্থির করে তুলছে।
আমার কেমন মনোবলটাই কমে যাচ্ছে,
আমি কেমন আরও বেশি অসহায় হয়ে যাচ্ছি মা।
পৃথিবীর তাবৎ মানুষ আজ প্রকৃতির এই পরীক্ষায় দিশেহারা।
এটা কী আদৌ পরীক্ষা,
না-কি শাস্তি সে নিয়ন্তাই জানেন।
ইদানিং খুব করে বাবার কথা মনে পড়ছে,
বাবা আর তুমি আমাকে কত কষ্টকরে বড়ো করেছ মা;
তোমাদের ঋণটাও বুঝি শোধ করতেও পারলাম না একটুকু।
তুমি ছাড়া তো এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই,
এই মহামারিতে যদি,
তোমাকে আমার হারাতে হয় মা।
আমার বেঁচে থাকটা যে সম্পুর্ণ অর্থহীন হয়ে যাবে তাহলে!
আমি যে এ অসহায়ত্ব মাঝে মাঝে আর নিতে পারি না মা গো।
পৃথিবীটা কেন এতো সঙ্গিন মা!
কেন এতো আপন হারানোর কষ্ট বুকে নিয়ে বাঁচতে হয় আমাদেরে!
কেন আমরা আমাদের খুব ছোট ছোট চাওয়া গুলোকে পেতে গিয়ে,
এতো বেশি দহনে পুড়ি!
এতো কঠিন কেন এ জীবন,
বলতে পারো মা!
থাক এসব বলে আর কী হবে বলো!
আমরা মানুষরা কতটা অসহায় জীবন পাওয়ার পরেও,
কত কত ভয়ঙ্কর কাজ করে ফেলি এই মানুষরাই।
নিজেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীনও মনে করি,
কখনও কখনও;
তাই হয়তো এ আমাদের উপর প্রকৃতিরই প্রতিশোধ।
প্রকৃতি আমাদেরকে ক্ষমা করুক মা,
আমরা আবারও নিরাপদ পৃথিবী দেখি।
হাসিখুশি মায়ের মুখখানি খুব কাছে থেকে,
চোখ ভরে, মন ভরে দেখি পৃথিবীর সকল সন্তান।
তুমি কিন্তু একটুকুও মন খারাপ করো না মা,
তোমার আর পৃথিবীর সকল মায়েদের দোয়ায়;
পৃথিবী আবারও নিরাপদ হবে,
আনন্দ আয়োজনে মাতবে ইনশাআল্লাহ।
এবার এসো তো মা,
ওই দূর থেকেই আমাকে একবার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরো।
খুব করে একটু আদর করে দাও তো আমায়।
আমার মা ও পৃথিবীর এপারের ওপারের সকল মা ভালো থাকুক,
নিরাপদ থাকুক আমাদের পৃথিবীর মায়েরা।
খুব ভালোবাসি মা তোমাকে,
খুব খুব ভালোবাসি।
শুধু আজকের দিনে নয়,
প্রতিটি দিন প্রতিটি ক্ষণ আমি তোমায় ভালোবাসি মা;
আমি তোমায় ভালোবাসি।
ইতি-
তোমার আদরের খোকা
০৯.০৫.২০২১
নাজনীন নাহার –
কবি ও সাহিত্যিক