গত পর্ব শেষ করেছিলাম ব্লাড ক্যান্সার/ লিউকেমিয়ার উপসর্গগুলি (Symptoms) কি কি হতে পারে তার আলোচনা দিয়ে। আজ জানার চেষ্টা করব ব্লাড ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে হলে কি কি সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে এবং এর কোন চিকিৎসা আছে কি?
ব্লাড ক্যান্সার থেকে নিরাপদ থাকার জন্যে বিশেষ কোন উপায় পাওয়া যায়নি। তবে সাধারণতঃ অন্যান্য ক্যান্সার থেকে নিরাপদ থাকার জন্যে যা প্রয়োজন তাই জানা গেছে। যেমন খাদ্য দ্রব্যের পুস্টিগুনের প্রতি লক্ষ্য রাখা, তামাক জাতীয় জিনিস বর্জন করা, খাদ্যের স্বাস্থ্যগুণ যাচাই করে খাওয়া, টিন জাতীয় পাত্রে সংরক্ষিত খাবার খাওয়াকে এড়িয়ে চলা, ফাস্ট ফুডকে ত্যাগ করা, তেল, চর্বি ও মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়া। কারো বিশেষ মুহূর্তে দেহে রক্ত গ্রহনের প্রয়োজন হলে যেন রক্তদাতার রক্ত নেয়ার আগে ভালো করে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে নেয়া হয়, কারন ঐ দাতার রক্ত ক্ষনিকায় যদি শ্বেত ক্ষনিকার মাত্রা অতিরিক্ত (লিউকেমিয়া) থাকে। তাহলে ঐ রক্ত গ্রহিতা একই ব্যাধিতে আক্রান্ত হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। আমার এক কাজীন ক্যান্সার মেডিসিনের ডাক্তার ছিলেন, তিনি বেঁচে থাকতে, আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে ক্যান্সার বিষয়ক সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম আমেরিকায় প্রতি ২ জনের একজন কোন না কোন জাতের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর একটা প্রথম কারন হলো টিন বা পট জাতীয় পাত্রে সংরক্ষিত খাদ্য ও ফাস্ট ফুড খাওয়া। আর বাংলাদেশ ও আশেপাশের দেশে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করে কৃষিজ দ্রব্য উতপাদন, দীর্ঘদিন সংরক্ষিত রাখার উদ্দ্যেশে উতপাদিত খাদ্যে বিভিন্ন বিষাক্ত ক্যামিক্যাল ফলফলাদি, মাছ, মাংস, সবজি ইত্যাদি খদ্যশস্যে প্রয়োগ করার ফলে এত অধিক মাত্রায় ক্যান্সার হচ্ছে। এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্যে একমাত্র গণসচেতনতা এবং প্রশাসনিক সদিচ্ছা, সচেতনতা, আন্তরিকতার মনোভাব সৃষ্টি করা ছাড়া কোন বিকল্প উপায় নেই। তাই নিজেকে, পরিবারকে, সমাজ ও রাষ্ট্রের সাধারণ জনগনকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এসব মরনাস্ত্রকে নির্মূল করতে।
এবারে জানা যাক কিভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে ব্লাড ক্যান্সার নিরুপন করা যায়?
ব্লাড ক্যান্সার সহজে ধরা পড়ে না কারো কারো ক্ষেত্রে, তবে আধুনিক গবেষকরা তাদের গবেষনায় কি পদ্ধতি পেয়েছেন এ পর্যন্ত তা একটু দেখা যাক যেমনঃ জনস হপকিন্স কিমেল ক্যান্সার সেন্টারের গবেষকরা একটি সাধারণ নতুন রক্ত পরীক্ষা তৈরি করেছেন যা ক্যান্সার কোষ থেকে ডিএনএ শেডের টুকরো টুকরো করে রক্তের মধ্যে প্রবাহিত করে সাতটি ভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারে বলে তাদের আবিষ্কার। এছাড়া, ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত রক্ত পরীক্ষার উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে: সম্পূর্ণ রক্ত গণনা (সিবিসি)। এই সাধারণ রক্ত পরীক্ষাটি আপনার রক্তের নমুনায় বিভিন্ন ধরণের রক্ত কোষের পরিমাণ পরিমাপ করে। রক্তের ক্যান্সারগুলি এই পরীক্ষাটি ব্যবহার করে সনাক্ত করা যেতে পারে যদি খুব বেশি বা খুব কম সংখ্যক রক্তের কোষ বা অস্বাভাবিক কোষ পাওয়া যায়। এপর্যন্ত এর কতটুকু প্রসার হয়েছে বা কার্যকরী হচ্ছে তা এখন আমাদের জানার ব্যাপার। আজ এ পর্যন্ত থাকলো। আগামী পর্ব আসবে এই রোগের নিরাময়ের কোন উপায় আছে কি? সে সম্পর্কে কিছু জানার ইচ্ছা নিয়ে। ততক্ষণ সবাই ভালো থাকুন, সচেতন থাকুন, মহান আল্লাহকে স্মরণে রাখুন। আর এই পর্বটি আপনাদের কাছে কেমন লাগল তা জানাতে পর্বটি পড়ুন এবং অন্যেকেও শেয়ার করুন।
রওশন চৌধুরী – সহ সম্পাদক চেতনা বিডি ডটকম