আল্লাহর অশেষ কৃপায় এই নিষ্ঠুর ব্যাধিটির সাথে দীর্ঘদিন বসবাস এবং বিজয়ঃ
আমি একজন ক্যান্সার উত্তরজীবী (survivor) 2011 তে এই ব্যাধিতে আমি আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমি তখন বাংলাদেশে। আল্লাহ্ র অশেষ মেহেরবানীতে এবং আমার চারপাশের সকল আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী, আমার তৎতকালীন কর্মস্থলের অভিভাবকবৃন্দ ও সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতা (আর্থিক ও মানসিকভাবে) ও দোয়ায় আমার সফল চিকিৎসা বাংলাদেশেই হয়েছিল। এমন কি আমার কর্মস্থলের সাথে ব্যবসায়িক লেনদেনে যারা ছিলেন তাঁদের অনেকের আন্তরিক সাহায্য সহযোগিতা ও দোয়া আমার ভাগ্যে জোটেছিল। আমি আজীবন তাঁদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। এবং সর্বদা মহান আল্লাহ্ তাআলার কাছে তাঁদের মঙ্গল কামনা করি। এই বছর 20২০ এ আমার সেই ভয়াবহ সময়ের “নয় বছর হয়ে গেল”। আমার এবিষয়ে লিখার মূল কারণের মধ্যে প্রথম যেটি, তাহলো উপরোল্লিখিত মহামানবতার পরিচয় দানকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা পুণঃ পুণঃ প্রকাশ এবং পরবর্তী কারণসমূহ আলোচনা করা। উদ্দেশ্য হলো এর মধ্যে যদি কোন রোগী আল্লাহর কৃপায় উক্ত ব্যধি থেকে মুক্তি পেয়ে যান, তবুও তিনি যে, আবার আক্রান্ত হবেন না এর নিশ্চয়তা কিন্তু কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানী অথবা চিকিৎসক এপর্যন্ত দিতে পারেননি।
তাই এমন রোগী ও রোগমুক্ত মানুষের প্রতি পরিবার পরিজন সহ তার সাথে সম্পৃক্ত যারাই আছেন – হতে পারেন তারা পরিবারের সদস্য, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় বন্ধু বান্ধব এমন কি হতে পারেন তারা কর্মস্থলের সহকর্মী কিংবা সেখানকার কর্তৃপক্ষ। সবাই যেন তার সাথে একটু সৌহার্দ্যসুলভ আচরন, একটু দরদীস্বরূপ ব্যবহার করেন। না – কোন করুণা নয়, সেটা হবে মানবিক কিংবা মানবতা অথবা মানবিক অধিকার মনে করে। আমি আমার নিজের অবস্থা, এইরকম অন্যান্য রোগীদের মানসিক অবস্থা ও বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞের মতামত থেকেই যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তা হলো এধরনের রোগী সুস্থ হলে এবং বেঁচে থাকলেও তারা খুবই সংবেদনশীল (sensitive) হয়ে যায়। তারা সামান্য কারনে আবেগ প্রবণ হয়ে যায়, এমন কি নিজেকে খুব অসহায় কিংবা অবাঞ্চিত মনে করে। এমন রোগী কিংবা survivor সকলের কাছ থেকে একটু কমলতার ছোঁয়া অথবা ভালবাসার কথা কিংবা একটু সম্মান দিয়ে কেউ তাকে সম্বোধন করুক এটা তাদের একটা মানসিক চাহিদায় পরিণত হয়ে যেতে পারে। এমন কি হয়েও থাকে। আমার 6 (ছয়টা) Chemotherapy ( রাসায়নিক মিশ্রপ্রয়োগের চিকিৎসা) দেয়ার পর আমার সার্জারি ডাক্তার যখন সবধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার লিস্ট দিয়েছিলেন তখন আমি ভারতের নয়া দিল্লির রাজীব গান্ধী ক্যান্সার হাসপাতালে গিয়েছিলাম টেস্টগুলো করাতে ( এপ্রিল 2012) সেখানে প্রত্যেক ডাক্তার এই কথাটাই বলেছিলেন রোগীর জন্য আজীবন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অবশ্যই প্রয়োজন এবং সবাই যেন এ কথা মনে রাখেন এমন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সৃষ্টিকর্তার পরম করুনা এবং সেই সাথে মানবিক আচরণ একটা বিরাট ভূমিকা রাখে। এছাড়াও আমি বিভিন্ন জায়গায় ক্যান্সার বিষয়ক আলোচনা সভা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের ক্যান্সার বিষয়ক সেমিনারে যোগ দেবার সুযোগ পেয়ে এসব বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিদের মতামত ও শোনেছি। এসব মূল্যবান মতাদর্শীদেরও প্রথম কথাই ছিলো মানসিকভাবে নিরাপদ থাকা। আর এর জন্যে প্রথমই হলো অনুকূল পরিবেশ। আমার বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত এবং আমেরিকায় এপর্যন্ত যেসব চিকিৎসকের সাথে এ ব্যপারে কথা হয়েছে তাদের সবার ঐ একই কথা পরিবার ও পরিবারের আশপাশে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকে। কারণ মানসিক চাপ ও কষ্ট থেকে এসব রোগের পুনর্বার আক্রমণের একটা বড় ধরনের কারণ ধরা হয়। আমাকেতো এখানকার একজন ডাক্তার বলেছিলেন তোমার মনের বিরুদ্ধে কোন মানুষের সাথে তুমি সম্পর্কে জড়িও না। এমন কি সে যদি তোমার অতি আপন কেউও হয়। কারণ সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটা তোমার প্রথম এবং প্রধান অধিকার তারপর বাকী সব।
রওশন চৌধুরী – সহ সম্পাদক চেতনা বিডি ডটকম।